যত সময় যাচ্ছে ঢাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভবনের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। কারণ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তৈরি হচ্ছে এসব ভবন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যেখানে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ভবনটিতে ছিল না কোনো ধরনের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এমন দুর্ঘটনার পর সরব হয়েছেন অনেকে। কথা বলেছেন নানা অসঙ্গতি নিয়ে। তেমনি নিজের নকশা করা একটি ভবন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ।
ধানমন্ডির-১৫ এ অবস্থিত ওই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে তিনি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা পুরোপুরি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্থপতি মুস্তাফা খালিদ লিখেছেন, ‘প্রতিনিয়ত ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা এবং অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি।’ ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু করে দেওয়া হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারংবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্বব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর।’
‘জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কী করা! তাদের এও জানানো হয় যে, সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে। উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গত মাসে অত্র এলাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশন মাস্টারকে এক বার্তায় বিষয়টি বললে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান।’
‘আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সাবেক ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তার সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশন মাস্টারকে বিস্তারিত তথ্য সমেত লিখলাম। দেখা যাক কী হয়।’ ‘যতদূর জানি এ ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে ইত্যাদি।’
তার দেওয়া এই পোস্টের পর মন্তব্য করছেন অনেকেই। মন্তব্য ছিল এমন- ‘ঘরে বাইরে, রাস্তাঘাটে কোথাও কেউই নিরাপদ নই আমরা। গুলশান, বনানী, ডিওএইসএস এলাকার বাইরে সব জায়গায় মোটামুটি ভয়াবহ অবস্থা। এমনকি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সুউচ্চ ভবনের দিকে তাকিয়ে যেতে হয় আর সাবধান হতে হয় ঝুলে থাকা এসির আউটডোর দেখেও।’
মন্তব্য করুন