আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর অধিকাংশ বহুতল ভবন। যে কোনো মুহূর্তে এসব ভবনে আগুনে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। যার সবশেষ উদাহরণ রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা। যেখানে এ পর্যন্ত ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছে।
যদিও অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলোর তালিকা করেই অনেকটা দায় সারে ফায়ার সার্ভিস। আবার যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হয় কি না, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে আলোচনায়ও পড়ে ভাটা। ধানমন্ডির-১৫তে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক ভবন, যার পুরোটিতেই খাবারের দোকান (বাপেট)। ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে তিনি একজন অগ্রগণ্য সমকালীন স্থপতি হিসেবে পরিচিত। ভবনটির নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার পরামর্শ পুরোপুরি না নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য বার্তাটি উপস্থাপন করা হলো-
‘প্রতিনিয়ত এই ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা এবং অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে সমূহ অগ্নিঝুকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে।’
‘স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু করে দেওয়া হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারংবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি।’ ‘ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদেরকে এও জানানো হয় যে সঠিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে। উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গতমাসে অত্র এলাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশনমাস্টারকে এক বার্তায় এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ঠ ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তার সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশনমাস্টার সাহেবকে সকাল বিস্তারিত তথ্য সমেত লিখলাম। দেখা যাক কি হয়।’
‘যতদূর জানি এভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে ইত্যাদি। প্রিয় লাভলু, তোমার লেখার পিঠেই কথাগুলো লিখলাম কারণ একজন সচেতন স্থপতি তো বটেই একজন শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব দৃশ্যমান অশনিসংকেতের মোকাবেলা করা।’
মন্তব্য করুন