রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টার পর থেকে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য স্বজনদের তথ্য চায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। তথ্য সংগ্রহ করে মরদেহ শনাক্তের পর হস্তান্তর শুরু হয়।
মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে। পুলিশ রাতেই ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, স্বজনরা যাদের শনাক্ত করতে পেরেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওই ভবনটি সাততলা। ওপরের তলাগুলোতেও রেস্তোরাঁ এবং তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বললেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ অবস্থা। বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢামেক ১৪ জন ও বার্নে আহতের সংখ্যা ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় ৪২ জনকে। তাদের মধ্যে চার শিশু ও ২১ নারী ছিলেন। বাকিরা পুরুষ। এ ছাড়া জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
মন্তব্য করুন