মালয়েশিয়ায় ফ্যাশন ডিজাইনিং এ পড়তেন রিয়া। শেষ সেমিস্টারের ছাত্রী। ফ্লাইট ছিল শনিবার। যাওয়ার দুই দিন আগে ভিকারুননেসা পড়ুয়া ছোট বোন আরিশা আর সিটি কলেজে পড়ুয়া খালাত বোন লিমুকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন বেইলি রোডের ওই ভবনে।
রিয়ার বাবা কোরবান আলী ঢাকা মেডিকেলে ঘুরছিলেন মেয়েদের খোঁজে। জরুরি বিভাগের মর্গে তিন বোনের লাশ দেখতে পাওয়ার পর তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
উদ্ভ্রান্তের মত আচরণ করছিলেন পোশাক কারখানার মালিক কোরবান। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।
এভাবেই বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অনেকে প্রিয়জনের মরদেহ খুঁজে পেয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়িতে। আবার অনেকে উদভ্রান্তের মতো খুঁজছেন প্রিয়জনকে।
এদিকে, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত চলে এসেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বললেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ অবস্থা। বার্ণ ইন্সটিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচি রাখার চেষ্টা। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায় নি। ঢামেক ১৪ জন ও বার্ণে আহতের সংখ্যা ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে গুরুত্ব আছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় ৪২ জনকে। তাদের মধ্যে চার শিশু ও ২১ নারী ছিলেন। বাকিরা পুরুষ। এ ছাড়া জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই ভবনটি সাত তলা। উপরের তলাগুলোতেও রেস্তোরাঁ এবং তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা উপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন উপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মন্তব্য করুন