সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, ইসলামী এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের শিরোনাম হচ্ছেন। এর মধ্যে র্যাগিং, মারামারি বা নিজেদের সঙ্গে নিজেদের সংঘাত অন্যতম। এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগ জড়িত থাকাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়াসহ সংগঠনের করণীয়, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কালবেলাকে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে কেউ সম্পৃক্ত হয়ে থাকলে ইতিপূর্বে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ক্রমান্বয়ে আমাদের শুদ্ধি অভিযানও জোরালো করব। আমাদের সাংগঠনিক সমস্যা যদি থেকে থাকে, যদি সংগঠনের ইউনিটগুলোর মধ্যে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়, তা সাংগঠনিক উপায়ে নিরসন করতে হবে।
তিনি বলেন, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ের কারণে শিক্ষার পরিবেশ এবং কোন ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ যেন ক্ষুণ্ন না হয়। যারা শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে, তাদের ওপর আমাদের যে গঠনতান্ত্রিক বিধান আছে তা আমরা প্রয়োগ করব। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়, তা বাস্তবায়ন করতে আমরা তাদের আহ্বান জানাব।
ছাত্রলীগের মূল লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়তনিক জীবনকে নিরাপদ করা এবং আনন্দময় করা। আমাদের এই সংগঠন আদর্শিকভাবে উদ্বুদ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া কখনোই কাম্য নয়।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিবদমান বিষয়গুলোর কারণে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এগুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্য স্থায়ীভাবে একটি সমাধান তৈরি করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ছাত্ররাজনীতিকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করা প্রয়োজন।
ছাত্রলীগে বর্তমানে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যে প্রক্রিয়াগুলো অবলম্বন করি শুধু সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এই সমাধানের জন্য আমরা কিছু প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছি। বিশেষ করে, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমস্যা হয়েছে, সেগুলোতে আমরা স্টুডেন্ট ডায়ালগ চালু করতে চাচ্ছি। সেখানে ওপেন ডিসকাশনের আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির কোনো খারাপ প্রভাব যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়ে সেই ব্যাপারে আমরা ভূমিকা পালন করব। এটির (স্টুডেন্ট ডায়ালগ) মাধ্যমে যদি আমরা ছাত্ররাজনীতিতে নতুন উপাদান তৈরি করতে পারি এবং ছাত্ররাজনীতির ভারসাম্য যদি আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এই সমস্যাগুলোর একটি স্থায়ী সমাধান হবে।
নেতাকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রবণতা বৃদ্ধির ব্যাপারে সাদ্দাম হোসেন বলেন, এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, ছাত্র রাজনীতির যে চর্চা রয়েছে এই চর্চাটা আসলে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন, ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য সম্পর্কে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের আরও বেশি সোচ্চার থাকা প্রয়োজন। ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে এনলাইটেন্ড জেনারেশন তৈরি করা, স্কিল ডেভেলপ করা, প্রবলেম সলভিং স্কিল তৈরি করা।
সমস্যা তৈরি করা ছাত্ররাজনীতির কাজ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমস্যা নিরসন করা ছাত্ররাজনীতির কাজ। ছাত্ররাজনীতি এবং একাডেমিক পরিবেশের ব্যাপারে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের মনে রাখতে হবে যে, মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আমাদের একাডেমিক পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নতি করার জন্যই ছাত্ররাজনীতি, রাজনীতি তো পরের বিষয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণকে কেন্দ্র করে আমাদের ছাত্র রাজনীতিকে যদি আমরা ঢেলে সাজাতে পারি তাহলে আমরা মনে করি যে, একটি গুণগত পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। ছাত্ররাজনীতির সিলেবাস সম্পর্কে আমাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে যে আধুনিক স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিজম পরিচালিত হচ্ছে, সেখানকার ছাত্ররাজনীতি কী রকম? সেখানকার ছাত্ররাজনীতি কীভাবে কাজ করে? তাদের রাজনীতির উপাদান কোনগুলো? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা ও ক্যাম্পেইন তৈরি করা প্রয়োজন। স্টুডেন্ট সেন্ট্রেড পলিটিকস নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে এই সমস্যাগুলো থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন