দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সচিবদের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভার পর সচিবালয়ে ফিরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।
পণ্য পরিবহনের সময় ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। আসন্ন রোজায় নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনীর ওয়াদা বা ইশতেহারের অগ্রাধিকারমূলক ১১টি বিষয় বাস্তবায়নে সচিবদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির বিষয়েও সভায় আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, উনি (প্রধানমন্ত্রী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে। নিউজ আসে। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। চাঁদাবাজি যাতে কোথাও না হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহবুব হোসেন বলেন, আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কর আদায়ের প্রতি সচিবদের মনোযোগী হতে বলা হয়েছে। যাদের আয়কর দেওয়ার কথা, অথচ করের আওতায় আসেনি, তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে জোরালো নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অহেতুক কারও যেন হয়রানি হতে না হয়। কোনো কারণে যদি কোনো বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটা তিনি ভালোভাবে নেবেন না বলে সচিবদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সভায় পাট, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তৈরি পোশাক খাতের মতো চামড়া, কৃষিজাত ও পাটজাত পণ্যে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহে যেন কোনো বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটা দেখতে বলেছেন।
মাহবুব বলেন, সভায় সব সচিব উপস্থিত ছিলেন। সচিব পদমর্যাদায় অন্য দপ্তর সংস্থায় যারা রয়েছেন তারাও সভায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশার কথা ও তার নির্দেশনা শুনতে চেয়েছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুস্পষ্টভাবে বলেছেন- আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব চালিয়ে যেতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ১৫-১৬ জন সচিব। তাদের মধ্যে ১১ জন নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রমজানের প্রস্তুতি, খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মমুখী শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- সংসদ কার্যক্রমে সচিবরা যেন যথাযথভাবে সহায়তা করেন। বিশেষ করে প্রশ্নোত্তর পর্বে সহায়তা করতে বলেছেন। সংসদীয় কার্যাবলির বিষয়ে কর্মকর্তাদের জানতে বলেছেন। তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন। মূলত ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া, আগামী পাঁচ বছরে সরকার পরিচালনার মূলনীতি হচ্ছে ইশতেহার। কাজেই ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে বলেছেন তিনি। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো- জনমানুষের অবস্থানের উন্নয়ন। কাজেই প্রকল্প থেকে জনমানুষের উন্নয়ন হয়েছে কিনা, সেটা তিনি জানতে চাইবেন। কাজেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্তব্য করুন