মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান মৃত্যুবরণ করেছেন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর পর রাজনীতির এ রহস্য পুরুষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হোক-ে এমনটা চান না তার পরিবার।
শুক্রবার (৯ জুন) সিরাজুল আলম খানের ছোটভাই ফেরদৌস আলম খান গণমাধ্যমকে এমনটাই জানান। তিনি বলেন, দাদা ভাই সিরাজুল আলম খান সবসময় প্রচারণার বাইরে থেকেছেন। তিনি বলে গেছেন, ‘তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়’। এমনকি দাফনের সময় তাকে কাফনের বদলে মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফন করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘মায়ের শাড়িটাই আমার কাছে পতাকা। আমি এই পতাকা নিয়েই আমি চলে যেতে চাই।’
সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ আলম খান বলেন, চাচা বলে গেছেন- ‘মৃত্যুর পরে আমাকে কোথাও রাখার দরকার নেই। আমাকে যেন ডিসপ্লে করা না হয়। আমার জন্য হাজার হাজার ফুল আসার দরকার নেই। আমি দেশটা স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম। আমি স্বাধীন করতে পেরেছি। সেটাই আমার বড় অর্জন। আমি কারও কাছে কিছু চাই না।’
‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ বইটিতেই সিরাজুল আলম খান তার শেষ ইচ্ছার কথাও বলেছিলেন। সেটি হলো, ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।'
শনিবার (১০ জুন) সকাল ১০টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মায়ের কবরের পাশেই শায়িত করা হবে।
এর আগে শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সিরাজুল আলম খানের। ৮২ বছর বয়সী সিরাজুল আলম খান উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। পরে ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন তাকে কেবিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী।
ছয় ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান মেট্রিক পাস করেছিলেন ১৯৫৬ সালে। ওই বছরেই ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং এরপর তিনি এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন।
পাকিস্তানবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও বহু ঘটনার নেপথ্য নায়কদের একজন হয়েও নিজে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হননি তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ নেতাদের সংস্পর্শে এসে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হয়েছিলেন এবং পরে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তার রাজনৈতিক উত্থান হয় বলে জানান যায়।
সিরাজুল আলম খান পরবর্তীকালে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন রাজনীতির একজন তাত্ত্বিক হিসেবে এবং যাকে তার কর্মী বা সমর্থকরা দাদা হিসেবে সম্বোধন করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
মন্তব্য করুন