খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের সালানা জলসা বন্ধসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, 'আহমদিয়া মুসলিম জামাত' নামধারী কাদিয়ানিরা আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে সালানা জলসার নামে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের মঞ্চ প্রস্তুত করেছে।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে মধুপুর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের সাথে ওয়াদা করেছিল, তারা কাদিয়ানিদের এ ধরনের সম্মেলন আর করতে দিবে না। কিন্তু কাদিয়ানি সম্প্রদায় সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে এই সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মধুপুরের পীর আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ এ দেশে একসাথে বসবাস করে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক ইসলাম ধর্মের অনুসারী-মুসলিম। সকল ধর্মের অনুসারীগণ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। বাংলাদেশের মহান সংবিধানেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের কথা সুস্পষ্টভাবে রয়েছে।
সম্মেলনে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা এমদাদুল হক শায়খে বালিয়া, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আব্দুল লতিফ ফারুকী, মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী নাজিরহাট, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা বশির আহমদ, মুফতি নেছার আহমদ, হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী, মাওলানা নুরুল হক হামিদী, মুফতি মাহবুবুর রহমান নবাবগঞ্জী, মাওলানা মাহমুদুল আলম পঞ্চগড়, মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মুমতাজী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা ইমদাদুল ইসলাম (গেন্ডারিয়া) মাওলানা আতাউল্লাহ বুখারী পীর সাহেব পাঙ্গাসিয়া,মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী, মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, মুফতি নাজমুল হাসান বিন নূরী, মাওলানা হারুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান প্রমুখ।
সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিসমূহ: -
১. অনতিবিলম্বে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির কথিত 'সালানা জলসা' বন্ধ করতে হবে।
২. ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আব্দুল জলিল ও বিচারপতি মো. ফজলুল করীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানিরা অমুসলিম বলে যে রায় প্রদান করেছেন অতি সত্বর তা জাতীয় সংসদে বিল পাস করে কাদিয়ানিদের অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করতে হবে।
৩. ইসলামের নামে তাদের সকল প্রকাশনা, প্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা অমুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। অতএব ইসলামের সকল পরিভাষা যেমন কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, মসজিদ, আজান, ইকামাত, নবী, মাহদী, মাসীহ, খিলাফত ইত্যাদি তাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে।
একই সময় কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছে।
কর্মসূচি:
১. সারা দেশে একই সময় 'ঈমান বাঁচাও লিফলেট' বিতরণ। ২. জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ৩. কাদিয়ানি ধর্ম কর্তৃক আক্রান্ত জেলাগুলোতে ২৫ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা। ৪. প্রত্যেক জেলার জনপ্রতিনিধিদের সাথে আকিদায়ে খতমে নবুওয়াত নিয়ে মতবিনিময়। ৫. দেশের প্রত্যেক জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের খতমে নবুওয়াত ফাইল প্রদান। ৬. জেলাভিত্তিক ডিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। ৭. জেলা ও বিভাগওয়ারী সম্মেলন। ৮. সারা দেশে একই সময়ে মানববন্ধন কর্মসূচি। ৯. ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ।
মন্তব্য করুন