এখনো দেশে ব্যবসায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট, উচ্চমূল্যস্ফীতি দেশের ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে অবকাঠামো, ঋণসহায়তা প্রাপ্তি এবং অস্থায়ী নীতি সহায়তায় বিষয়ে সামান্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩ : উদ্যোক্তা জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জরিপে উঠে এসেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের সেবা, শিল্প, কৃষি, উৎপাদন খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭১ জন পদস্থ কর্মকর্তার গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এ মতামত জরিপে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২৯.৫৮ শতাংশ, মাঝারি ব্যবসায়ী ৩৫.২১ ও বড় ব্যবসায়ী ৩৫.২১ শতাংশ।
জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, শতভাগ বড় ব্যবসায়ীর জন্য প্রধান সমস্যা দুর্নীতি, মাঝারি ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে সমস্যা মনে করছেন এবং ৫৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন। আবার ছোটছোট সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন, যেখানে বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা এসব ক্ষেত্রে কিছুটা কম।
এদিকে গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা বড় ব্যবসায়ীদের বেশি প্রভাবিত করেছে। ৬২ শতাংশ বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এ বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা ছিল, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিল ৩৮ শতাংশ। রিজার্ভের কারণে বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে এ সময়।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যেমন ঋণপ্রাপ্তি অবকাঠামোর মতো বিষয় নিয়ে তাদের অধিক চিন্তিত থাকতে হতো এখন তাদের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এতে কিছু ব্যবসায়ীর সক্ষমতাও বেড়েছে, তবে মোটাদাগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।
তিনি বলেন, তবে দুর্নীতিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে সার্বিকভাবে কিন্তু আমাদের গত বছরের উৎপাদন, তার আগের বছরের উৎপাদনের তুলনায় অনেকটা কমেছে। গত বছর ব্যবসায়ীরা ভালো করেছেন, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুবই কম। ডলার সংকটে অনেকে কাঁচামাল কিনতে পারেননি। অনেকে আমদানি করতে পারেননি, বাজারে সরবরাহ করতে পারেননি।
এদিকে জরিপে আরও উঠে এসেছে, এশিয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তারা প্রায় প্রত্যেকেই বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের উপরে।
শুধু দক্ষিণ এশিয়ার বিবেচনাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে নেই। টেকসই অর্থনীতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের পরই বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সুচক ভাল বলা যাবে না।
ব্যবসায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জরিপে বলা হয়েছে, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটে ভুগবে ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, ডলার সংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।
মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিবেচনায় প্রাধান্য দেওয়া।
মন্তব্য করুন