স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার (প্রশিক্ষণার্থী) ১ হাজার ৮০ পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২০ সালে। নেওয়া হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। এরপরই চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কথা ছিল। চাকরিপ্রার্থীরা ফল প্রকাশের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন। এর মধ্যেই গত রোববার রাতে নিয়োগপ্রক্রিয়াটি বাতিল করে অধিদপ্তর জানিয়েছে, আবেদনকারীদের আবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বসতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বলেছে, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম হয়েছে, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর ভিত্তিতেই নিয়োগপ্রক্রিয়াটি বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, হঠাৎ করে নিয়োগ বাতিল করায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। কারণ, চাকরির শর্তপূরণে অনেক বিবাহিত নারীই সন্তান নেননি।
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ১০ মার্চ। এ পদে শুধু নারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ ছিল। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে মোট ৪৬টি জেলায় এই পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী। তাদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন ৭ হাজার ৬২১ জন। মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ২২ মে, যা শেষ হয় ১৮ জুন।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক শারীরিক সুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বা নয় মর্মে সনদ জমা দিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হবে। এ নিয়ে সমালোচনার পর গত বছরের ১১ অক্টোবর শর্তটি বাতিল করে অধিদপ্তর।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গত রোববারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বরের পর্যবেক্ষণ এবং পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নসংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নপ্রক্রিয়া বাতিল করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আগের বিজ্ঞপ্তির আওতায় আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা আবার নেওয়া হবে।
মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সিমলাম সুমি বলেন, ‘সবই বুঝলাম কর্তৃপক্ষ চাইলে নিয়োগ বাতিল করতে পারে, তাই বলে তারা প্রায় চার বছর এভাবে নষ্ট করে দিতে পারেন না। আর বাতিল বললেই বাতিল মানব কেন? যারা দুর্নীতি করছে তাদেরটা বাতিল করুক। কিছু কুলাঙ্গারের জন্য অন্য নির্দোষরা কেন শাস্তি ভোগ করবে? সবাই তো আর দুর্নীতি করেনি। যারা দুর্নীতি করছে তাদেরটা বাতিল করে বাকিদের রেজাল্ট ঘোষণা করা হোক।’
মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরেক পরীক্ষার্থী ফৌজিয়া আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আমি চরম হতাশ। এর আগে দুটি ভাইবা দিয়েও জব হয়নি। এটাই আমার সর্বশেষ সরকারি চাকরির ভাইবা ছিল। কারণ বয়স ৩০ পেরিয়ে গেছে। পরীক্ষা এবং ভাইবা ভালো হওয়ায় জব পাওয়ার বিষয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। চাকরির আশায় অনেক নারী দীর্ঘদিন সংসার করার পরও সন্তানধারণের প্রক্রিয়ায় যেতে পারেননি। অথচ সাড়ে তিন বছর পর নিয়োগ বাতিল করা হলো। এতে আমাদের জীবনে বড় ক্ষতি হলো। এর দায় কে নেবে? এখন বলা হচ্ছে লিখিত পরীক্ষাতে অনিয়ম হয়েছে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে কেন সাড়ে ৭ হাজার প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলো?’
এ বিষয়ে জানতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুকে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন