কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতংকিত ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে : ঐক্য পরিষদ 

রাণা দাশগুপ্ত। ছবি : সংগৃহীত
রাণা দাশগুপ্ত। ছবি : সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত চাপ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন প্রচারণায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ মন্দির পোড়ানো ও ফসলি জমির ধান নষ্ট করা হচ্ছে। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন, ভোটকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা প্রশাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কিছুতেই রুখতে পারছে না। নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সম্ভাব্য নির্যাতনের মাত্রা আরও কী কী হতে পারে এবং এর শেষই বা কোথায়, তা নিয়ে ধর্ম নির্বিশেষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতংকিত ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

গত দুই দিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করে সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এখনি যদি কঠোর হস্তে এদের দমন করা না হয় তবে সন্ত্রাস ও নির্যাতনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

২০১২ সালের ন্যায় আবারও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহারে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের কথা উল্লেখ করে ইসিতে দেয়া অভিযোগ ও বিবৃতিতে বলা হয়, গত পাঁচ জানুয়ারি দিবাগত রাত দুটার দিকে চেরাংঘাটা রাখাইন সম্প্রদায়ের উসাইসেন (বড় ক্যাং) বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বিহারের বেশকিছু অংশ পুড়ে গেছে। নির্বাচনের একদিন পূর্বে এ ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্ত’র কাঁচি প্রতীক সমর্থন করা ও জনসভায় যোগদান করায় গত শুক্রবার সকালে একদল দুর্বৃত্ত নৌকার স্লোগান দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রয়াত রবীন্দ্র কুমার বৈষ্ণবের ছেলে রঞ্জন কুমার বৈষ্ণবের প্রায় এক হেক্টর বোরো জমিতে জোরপূর্বক মই দিয়ে কমপক্ষে ১০০ মণ উৎপাদিত ধানের ক্ষতি করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ-১ ও ২ সংসদীয় আসনে মারাত্মক খারাপ কিছু ঘটতে পারে বলে স্থানীয়ভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরী শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান জসিম, সরোয়াতলির বেলাল ও আমুচিয়ার কাজল তাদের লোকজন দিয়ে এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সংখ্যালঘু ভোটারদের বলা হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের কাছ থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সরকারি সুবিধাভোগী টিসিবির কার্ড কেড়ে নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকরা নৌকার সমর্থক সবুজ চন্দ্র দাশ ও আকাশ রায়কে গুরুতরভাবে মারধর করার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত তিন জানুয়ারি ইসিতে সুপারিশ করেছেন এ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান। এ ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে ভীতি দেখা দিয়েছে।

ঝিনাইদহ-১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের সমর্থক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের ওপর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের অনুসারীরা গত তিন জানুয়ারি রাতে তমালতলা বাজারে হামলা চালিয়ে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৌকায় ভোট দিতে বল প্রয়োগ, হুমকি-ধমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে।

স্থানীয় সন্ত্রাসী আদনান জাভেদের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় গত চার জানুয়ারি রাতে মুছাপুর, সন্তোষপুর, মগধরা, সারিকাইত ইউনিয়নের সংখ্যালঘু পল্লিতে ঢুকে মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা বলেছে, ‘তোমরা নৌকা মার্কার ভোটার এটা আমরা জানি, তোমাদের কষ্ট করে কেন্দ্রে যেতে হবে না। তোমাদের ভোট আমরা দিয়ে দেব, কেন্দ্রে গেলে তোমাদের জাল-নৌকা সবই যাবে’। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে সবার ঘরের টিনে আঘাত করে বেরিয়ে যায়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ঈগল প্রতীক সমর্থন করায় নৌকা মার্কার সমর্থক মৎস্যজীবী লীগ নেতা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭-৮ জনের একদল সন্ত্রাসী গত চার জানুয়ারি ঝুলন দত্ত, বিক্রম জিৎ মিত্র ও রনি দের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা প্রাণ বাঁচাতে শ্রী শ্রী গৌর গোবিন্দ আশ্রমে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারাল ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণসভা

জাবিতে সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বরিশালে অফিস কক্ষ থেকে সার্ভেয়ারের মরদেহ উদ্ধার

খালে গোসল করতে নেমে কলেজছাত্রের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান, দেড় লাখ টাকা জরিমানা

রাজশাহী নগরীর ৭৮ মণ্ডপে অর্থসহায়তা

সিলেটে প্রাইভেটকার থেকে ১২ লাখ টাকার পণ্য জব্দ

টেকনাফে অপহরণ ও ডাকাতির অভিযোগে দুজন গ্রেপ্তার

আন্দোলনে কিশোর আরাফাতকে গুলি করে হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

১০

সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ওএসডি

১১

যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

১২

প্রথম মাসের বেতন ত্রাণ তহবিলে দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

১৩

জীবনে সব প্রয়োজনে আল্লাহকে স্মরণ করুন : মাসুদ সাঈদী

১৪

পরিত্যক্ত ডোবায় মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ 

১৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব গ্রেপ্তার

১৬

আবরার ফাহাদকে নিয়ে ঢাবি শিবির সভাপতির স্ট্যাটাস

১৭

সরকারি চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১৮

বিভিন্ন হামলা-নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ববি ছাত্রদল

১৯

বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির আভাস

২০
X