ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্রের ‘বৈশ্বিক অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’- তালিকায় স্বীকৃতি উপলক্ষে রিকশাচিত্রশিল্পীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রিকশাচিত্রশিল্পের বহমান ধারায় কিছু নতুনত্ব সংযোজন প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জনজীবনের পাশাপাশি এদেশের সংগ্রামী ইতিহাস বিশেষত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রিকশাচিত্রে ধারণ করা জরুরি।
বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে রিকশাচিত্রশিল্পীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আরও বলেন, আসন্ন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে যেমন রিকশাচিত্রশিল্পের সংযোজন থাকবে তেমনি আসন্ন অমর একুশে বইমেলায়ও রিকশাচিত্রশিল্পের বিশেষ স্থান থাকা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আলোচনায় অংশ নেন ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ওয়ালিদ বিন কাশেম এবং বাংলা একাডেমির ফোকলোর জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. আমিনুর রহমান সুলতান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর।
অনুষ্ঠানে ১১১ জন রিকশাচিত্রশিল্পীকে সনদ, শুভেচ্ছা স্মারক এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা সম্মানী তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি ও মহাপরিচালক। এ ছাড়া এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি কতৃর্ক সদ্য প্রকাশিত ‘RICKSHAWS AND RICKSHAW ART IN DHAKA’ অ্যালবাম এবং ড. আমিনুর রহমান সুলতান রচিত ঢাকা জেলার লোকসংস্কৃতি গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
খলিল আহমদ বলেন, রিকশাচিত্রশিল্পের বহমান ধারায় কিছু নতুনত্ব সংযোজন প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জনজীবনের পাশাপাশি এদেশের সংগ্রামী ইতিহাস বিশেষত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রিকশাচিত্রে ধারণ করা জরুরি।
সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলার লোকসংস্কৃতির এক অনন্য উদাহরণ রিকশাচিত্রশিল্প। এই শিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্বসভায় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের রিকশাচিত্রশিল্পের ইতিহাসে ইউনেস্কো-স্বীকৃতি এক অসামান্য অর্জন। এই অর্জন বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বাংলা একাডেমি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রণোদনায় রিকশাচিত্রশিল্পের কারিগরদের সংবর্ধিত করতে পেরে আনন্দিত।
ড. আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, রিকশাচিত্রশিল্পীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালীকরণ এবং ইউনেস্কোতে রিকশাচিত্রশিল্পের যথাযথ উপস্থাপনে বাংলা একাডেমি তার জাতীয় সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন করেছে। রিকশাচিত্রশিল্পের ইউনেস্কো-স্বীকৃতির নেপথ্যে যে শিল্পীদের অবদান মূল ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে, তাদের সংবর্ধিত করাও আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
ওয়ালিদ বিন কাশেম বলেন, ইউনেস্কোতে দীর্ঘ কারিগরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশের রিকশাচিত্রশিল্প আজ পৃথিবীব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। এই স্বীকৃতির প্রধান কারিগর বাংলাদেশের রিকশাচিত্রশিল্পীদের সংবর্ধনার আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় রিকশাচিত্রশিল্পের একটি বিশেষ স্কয়ার স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিকশাচিত্রশিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দিনটি এদেশের রিকশাচিত্রশিল্পীরা উদযাপন করবেন।
ড. মো. হাসান কবীর বলেন, বাংলা একাডেমি সবসময় রিকশাচিত্রশিল্পীদের পাশে থাকবে এবং রিকশাচিত্রশিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশে ভূমিকা পালন করে চলবে।
মন্তব্য করুন