আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আমরা আর মামুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি তো আসন্ন নির্বাচনকে নির্বাচনই মনে করি না। অ্যাক্ট অব চয়েজ বলে একটা কথা আছে। বিকল্প না থাকলে তো নির্বাচন হয় না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হতে পারে।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি তৃষ্ণার্ত, আপনাকে যদি এক গ্লাস ট্যাপের পানি দেওয়া হয় আর আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়; আপনি কোনটা নেবেন? আপনি আমাদের দেশের যে ট্যাপের পানি সেটা কি নেবেন? নেবেন না। আবার আপনাকে যদি এক গ্লাস সেদ্ধ পানি ও আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়, তাহলে কোনটা নেবেন? আপনার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা থাকবে। কারণ, দুটো পানিই নিরাপদ। আপনি বলতে পারবেন না তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি মিনারেল পানিই খাবেন। ঠিক নির্বাচন হতে হলে যথার্থ বিকল্প থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে দুটো প্রধান ব্র্যান্ড। একটা আওয়ামী লীগ ও আরেকটা বিএনপি। বিএনপি তো নেই। যদি না থাকে তাহলে নিশ্চিত করে বলাই যায়— আওয়ামী লীগ চাইলে সবার সঙ্গে জিতবে। কিন্তু তারা আসন ভাগাভাগি করছে কেন? অন্যদের কিছু সিট দেওয়ার জন্য। প্রতিযোগিতা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে, নিজেদের অনুগত বা নিজেদের সৃষ্ট নাম সর্বস্ব দলগুলোর সঙ্গে।’
‘একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন— জাতীয় পার্টি দ্বারা মনোনীত ও আওয়ামী লীগ দ্বারা সমর্থিত। তাহলে এটাতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। এটা ভোটের খেলা, নির্বাচন-নির্বাচন খেলা, যা নির্বাচনী সংজ্ঞায় পড়ে না।’
সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমার যেটা বিশ্লেষণ-এটা ভোটের একটা খেলা। ভোটের খেলা হচ্ছে। গত দুটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। যার ফলে সরকারের যে লেজিটিমেসি সমস্যা, তা কিন্তু দূরীভূত হবে না। বরং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কারণ এখন কিন্তু আমাদের নির্বাচনের ওপর অনেকের চোখ আছে। অতীতে কিন্তু সেই চোখ ছিল না। এই লেজিটিমেসির সমস্যায় বিদেশি বন্ধুদের ওপর আমাদের আরও নির্ভরশীল হতে হবে। যেটায় আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরী বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এই রকম আরও অনেকে অনেকের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, আইনগতভাবে তারা কেউই বৈধ নাম প্রস্তাবকারী ছিলেন না। অথচ তাদের নাম প্রস্তাবের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। যারা বৈধ নয়, তাদের প্রস্তাবেই যদি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় তাহলে তাদের বৈধতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠেই। এটা নিয়ে আমি বহু সমস্যার মধ্যে আছি।’
বদিউল আলম বলেন, ‘আমি কেবিনেট ডিভিশনে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম— কারা কার কার নাম প্রস্তাব করেছে। বলা হলো গোপন তথ্য। তথ্য কমিশনে গেলাম, বলা হলো এই তথ্য দেওয়া হলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হবে। তখন আমরা আদালতে যাওয়ার চিন্তা করলাম। তিন দিন কোর্টে হিয়ারিং করার পর রুল হয়েছে।’
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে যদি প্রশ্ন হয়, তাহলে তাদের তপশিল ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেই। এগুলো তো আমরা লুকিয়ে রেখেছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এগুলো সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে। যারা আমাদের ওপর নজর রাখছেন তারাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। যা আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।’
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় যে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়েছে তা অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক চার শব্দের একটা রায় দিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ১০ মে বলেছিলেন— ত্রয়োদশ সংশোধনী মানে ভবিষ্যতের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক। পরের বাক্যেই বলা আছে— পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় হতে পারে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা দিয়েছে। বলা হয়েছে, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু আদালতের রায় অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ব্যাপারে গণভোট করার কথা। সেটা না করেও সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে যে আইন তাতে বলা আছে রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন নাম প্রস্তাব করবে। কিন্তু যখন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল তখন সেটি উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। সুতরাং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের আইনগত বৈধতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তো তার সব কার্যক্রম, তপশিল ঘোষণা এবং নির্বাচন আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।’
মন্তব্য করুন