বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩১ এএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- মহান বিজয় দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। বিজয়ের আনন্দঘন এদিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।

তিনি বলেন, আমি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। তারই নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সদ্যস্বাধীন দেশে ফিরে জাতির পিতা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন কৃষি বিপ্লবের। আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোর, লুটেরাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তার পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নয়নের সেই অভিযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। রুদ্ধ হয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথ। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ আজ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির ফলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক স্বপ্নের পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানাসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা ঘোষিত এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। বাংলাদেশ মনে করে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিরীহ-নিরস্ত্র জনগণের ওপর বর্বরোচিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। জাতি তাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। আমি আশা করি, বিশ্বমন্দা ও অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসী ভাইবোনরা রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন এবং দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: বিজয়ের ৫৩ বছর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্ধুর হবু বউকে ধর্ষণ ছাত্রদল নেতার

যুদ্ধে যেতে বাধ্য রাশিয়ায় পাচার হওয়া ১০ বাংলাদেশি, নিহত ৩

মাটির নিচে পাওয়া মর্টার শেল বিস্ফোরণ, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

বরিশালে একযোগে ১১ পুলিশ পরিদর্শকে বদলি

পালানোর সময় ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে পুলিশে দিল বিএনপি

সিলেটে ঘর থেকে সিসিক কর্মচারীর লাশ উদ্ধার

এনসিপির পদ ছাড়লেন কেন্দ্রীয় সদস্য রিদওয়ান হাসান

ছাত্রদল নেতার ঘরে আ.লীগ নেতা

তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের কমিটি নিয়ে চরম কোন্দল, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

১০

নদী রক্ষায় চার সচিবসহ ১১ জনকে বেলার আইনি নোটিশ

১১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

১২

রাখাইনের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ হবে ঝুঁকিপূর্ণ : ১২ দলীয় জোট

১৩

মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের একক সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী : রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

১৪

ভবনে নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁ / ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণায় সংকটে শত শত রেস্তোরাঁ 

১৫

‘অব্যবস্থাপনার জন্য নদী-নালা, খাল-বিল দূষণ ও ভরাট হচ্ছে’

১৬

পরমাণু ছাড়াও আরেক ভয়াবহ সংকটের মুখে ভারত-পাকিস্তান

১৭

স্টারলিংককে কাজ শুরুর লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি

১৮

বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের নতুন কমিটি গঠন

১৯

সিরাজগঞ্জে অবৈধ শিশু খাদ্য তৈরির কারখানা সিলগালা

২০
X