কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে সরকার চরম অবহেলা করছে’

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও পার্বত্য ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : কালবেলা
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও পার্বত্য ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : কালবেলা

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ভূমি বিরোধ, ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। সরকার এ চুক্তিকে শুধু অগ্রাহ্য করছে না, এটাকে চরম অবহেলাও করছে।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান সম্মেলন কক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও পার্বত্য ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন ও এএলআরডির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সরকার নিজেই আইন করে, চুক্তি করে আবার নিজেই সেই আইন ভঙ্গ করে, চুক্তি ভঙ্গ করে। সরকার যেন চালাক হয়ে উঠছে আর ভাবছে যে জনগণকে বোকা বানিয়ে আইন ও চুক্তি ভঙ্গ করেও নিরাপদে টিকে থাকা যাবে। কিন্তু কোনো অসততা দিয়ে, মোনাফেকি দিয়ে এ দেশের মানুষকে বোকা বানানো যায়নি, যাবেও না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রায়ই সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন, দপ্তর হস্তান্তর, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থ ব্যয়ের কথা গর্বভরে উল্লেখ করে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে কোন কোন জায়গায় ব্যর্থতা আছে সেটি সরকার উল্লেখ করে না। চুক্তির মৌলিক বিষয় আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, স্থানীয় প্রশাসনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি, কার্যকর ভূমি কমিশন, টাস্কফোর্স কোনো কিছুই হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখে।

সেমিনারে খুশী কবির বলেন, বাংলাদেশে যে আধিপত্যবাদ ও নিয়ন্ত্রণবাদের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে তারই প্রভাব গিয়ে পড়ছে পার্বত্য অঞ্চলে। পার্বত্য অঞ্চলে যে বাঙালি সেটেলারকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তারা রাষ্ট্রীয় আধিপত্যবাদকেই সমর্থন করবে। চুক্তির ধারা মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠী অস্ত্র সমর্পন করলেও তাদের অধিকার ও দাবি, বিশেষ করে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, মানা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পার্বত্য অঞ্চল দখলে রেখে, সেখানকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণকে ধ্বংস করে আধিপত্যবাদ, পর্যটন, ব্যবসা ও ভূমি দখলের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছে। যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধিকার না পায়, স্বাধীন নাগরিক অধিকার ভোগ না করতে পারে, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা না পায় তবে বাঙালি মুসলমান ও নাগরিক হিসেবে আমাদেরও মুক্তি নেই, আমাদের স্বাধীনতারও তাৎপর্য নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান পর্যটন, দখল, আগ্রাসন, সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি প্রান্তিকতায় ঠেলে দেওয়া এবং পাহাড় দখল, নাম বদল, জমি দখলের এই ধারা বন্ধ করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, পার্বত্য চুক্তি সরকার করেছে, সরকারেরই দায়িত্ব চুক্তি বাস্তবায়ন করা। সেটি নাহলে প্রতারক, ধোকাবাজ হিসেবে বদনাম নিতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে, দায় এড়ানো যাবে না। এ সময় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং পার্বত্য চুক্তি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ আয়োজনের সুপারিশ করে বলেন, পার্বত্য আদিবাসীরা গত ২৬ বছর ধরে ধোঁকার মধ্যে আছে, কেন এই ধোঁকাবাজি করা হলো তার জবাব চাই।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, রাষ্ট্র পাহাড়িদের সঙ্গে প্রতারণা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে অপমানিত করছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কেবল রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতাই নয়, আমাদের নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যদি আমরা ঠিকমতো পালন করতে পারি তাহলে আজ না হোক, কাল, কাল না হোক তার পরের দিন, এক দিন না এক দিন এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী, বৈচিত্র্যময়, সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যের নীতিতে পরিচালিত না হয় তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুফল পাওয়া যাবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বরগুনায় ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

একযোগে পদত্যাগ করলেন ভিসি, ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা  

ঝিলাম নদীর পানি ছেড়ে দিল ভারত, পাকিস্তানের কাশ্মীরে বন্যা

জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আরও ১৫ সনাতন ধর্মাবলম্বী যোগ দিলেন জামায়াতে

দিনাজপুরে ২০০ বছরের পুরোনো ঘোড়ার মেলা শুরু

ইরানের বন্দরে বিস্ফোরণ : নেপথ্যে কি ইসরায়েল?

ধর্ষণ মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা ঘেরাও

কাশ্মীর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলায় গ্রেপ্তার বিধায়ক

পুলিশ-রিকশাচালক সংঘর্ষে গ্রেপ্তার ১

১০

চীন সব সময় শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখতে চায় : মির্জা ফখরুল

১১

ঢাবিতে ছাত্রদল নেতার পরিচ্ছন্নতা অভিযান

১২

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে চতুর্থ অর্থনীতি গবেষণা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৩

আবারও শাস্তির মুখে হৃদয়

১৪

কাভার্ডভ্যানচাপায় ছাত্রদল নেতার স্ত্রী নিহত

১৫

পারমাণবিক অস্ত্রে কে এগিয়ে, পাকিস্তান নাকি ভারত?

১৬

কুমিল্লায় তিন স্থানে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০

১৭

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেনাদের ‘গতিবিধি’ সম্প্রচারে কড়াকড়ি আনল ভারত

১৮

লাহোরের একাদশ থেকে বাদ পড়লেন রিশাদ

১৯

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ সফলে হেফাজতের প্রস্তুতি সভা

২০
X