বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেছেন, নিবন্ধন আর নিয়ন্ত্রণ এক নয়। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ থাকবে, তবে তারা যেন নিয়ন্ত্রিত না হয়ে যান। সমবায়ের নিবন্ধন সহজ করে করতে হবে, আর সেটা দেখভালের জন্য একটা কমিশন থাকতে পারে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেটে দৈনিক কালবেলার প্রধান কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমবায় গঠনে অন্তরায় ও উত্তরণ: প্রসঙ্গ সমবায় সমিতি আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও দৈনিক কালবেলা গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
শামসুল হুদা বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সমবায় দিবসের বক্তৃতায় বলেছিলেন- ‘আমাদের সমবায় আন্দোলন হবে সাধারণ মানুষের যৌথ সমবায় আন্দোলন’। তিনি কিন্তু সমবায়কে সরকারি অধিদপ্তরের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেননি। সমবায় হবে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতিষ্ঠান।
সমবায়ের কাঠামো গঠন প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সমবায় নিয়ে গঠিত কমিশনের প্রধান কোনো সরকারি কর্মকর্তা হবেন না। সেই কমিশনের প্রধান হতে হবে যিনি সমবায় সম্পর্কে জানেন, দীর্ঘদিন সমবায় নিয়ে গবেষণা ও কাজ করেছেন। সে রকম একজন ব্যক্তি সেই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন। আমাদের অর্থনীতি কৃষকনির্ভর। আর আমাদের খাদ্য চাহিদার ৮০ ভাগ উৎপাদন করে কৃষক। এসব দিক তিনি গুরুত্ব দেবেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সমবায় আন্দোলন করেছেন বলে তার জীবনীতে দেখিনি। কিন্তু সমবায়কে তিনি বুঝতেন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও তার নজরে ছিল। তিনি বলেছিলেন, এটা আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থাকা যাবে না, মুক্ত করতে হবে। সমবায়ীরাই এটার নেতৃত্ব দেবেন, কর্তৃত্ব করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেছেন, দুর্নীতিবাজ এবং সমাজের এলিট শ্রেণি (বড় কৃষক) নয়, প্রান্তিক মানুষ সমবায়ের নেতৃত্বে থাকবেন। কারণ বড় কৃষকরা আসলে প্রান্তিক কৃষকরা আরও নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
শামসুল হুদা বলেন, সমবায়ে সরকারের ঋণ কিংবা অনুদান সরাসরি যাওয়া উচিত না। সরকার দিতে চাইলে কৃষি ব্যাংকে দিয়ে দিতে পারে। যার জন্য কৃষি ব্যাংকের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে শুধু সমবয়ীদের সেবা দেওয়া হবে। কিংবা সমবায় ব্যবস্থায় একটা সমবায় ব্যাংক থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবায় একটা বিভাগ হতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো এত তাড়াতাড়ি এটা চিন্তা করবে না।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও কালবেলা মাল্টিমিডিয়ার শিফট ইনচার্জ অমিত হাসান রবিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) আহসান কবীর।
আলোচক ছিলেন উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি ও রাজশাহীর রুলফাওর পরিচালক আফজাল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন