কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাস অনেক পুরোনো। দলটির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রাম। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনেও অন্যতম কারিগর আওয়ামী লীগ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় এই দলটি। শুরুতে এই দলের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বিকেলে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় এই রাজনৈতিক দল। পরে এই দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস

১৯৪৭ সালের আগস্টে ভাগ হয় দুটি দেশ। গঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এর এক বছর পর ১৯৪৮ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মওলানা আকরম খাঁ ও খাজা নাজিমুদ্দিন। সে সময় সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী উদারপন্থি নেতারা নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোগলটুলীতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেন। সেখানেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করেন তারা।

এরপর কলকাতা থেকে এসে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন শেখ মুজিবুর রহমান। তখন টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করায় শূন্য ঘোষণা করা হয় একটি আসন। সেই আসনের উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী ও শামসুল হক। কিন্তু তাদের দুজনের নির্বাচনী ফলাফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তখন তারাও মুসলিম লীগ কর্মীদের সঙ্গে মিলে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। তারা একটি সভা ডাকেন। সেই সভা ডাকার প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কিন্তু সেই সভা করার জন্য কোনো অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কেএম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহ্বান জানান।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বিকেলে সেখানেই ২৫০ থেকে ৩০০ লোকের উপস্থিতিতে গঠন করা হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। আর পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এর নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি করা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ছিলেন যারা

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের পর নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় মওলানা ভাসানীকে। তখন ৪০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি করা হয় মওলানা ভাসানীকে; সহসভাপতি হন আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আহমেদ আলী খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান এবং সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। আর ট্রেজারার করা হয় ইয়ার মোহাম্মদ খানকে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও সে সময় কারাগারে আটক ছিলেন তিনি। কমিটি গঠনের পরের দিন, ২৪ জুন একটি জনসভা ডাকা হয় আরমানিটোলা ময়দানে। কিন্তু সেই সভায় হামলা চালায় তৎকালীন মুসলিম লীগের কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তন

আওয়ামী লীগের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখেছেন লেখক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ। সেখানে তিনি লিখেছেন, “দলের নামের সঙ্গে মুসলিম শব্দটি থাকায় এ নিয়ে আপত্তি করেছিলেন অনেকে। এ নিয়ে দলে সৃষ্টি হয় বিরোধ। পরে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় একটা সমঝোতা হয়। সেখানে বলা হয়, এই দল হবে একটি অসাম্প্রদায়িক দল। ওই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট বাঁধে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খেলাফত পার্টি আর নেজামে ইসলামী পার্টি। এই জোটের নাম দেওয়া হয় যুক্তফ্রন্ট।

এই জোটের প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫৪ সালের ওই নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি পায় যুক্তফ্রন্ট, আর এর মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ পায় ১৪৩টি আসন। বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের এক কাউন্সিলে বাদ দেওয়া হয় ‘মুসলিম‘ শব্দটি। এর পর থেকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীও এই দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় থেকে বাদ পড়ে পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি। নতুন নাম হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।”

আওয়ামী লীগের প্রথম ভাঙন

১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরে ১৯৫৩ সালে ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে এই রাজনৈতিক দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়।

ওই বিরোধের কারণে একই বছরের ১৮ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন মওলানা ভাসানী। এর পর ২৫ জুলাই ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন তিনি।

সে সময় আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা তার নতুন দলে যোগ দেন। যাদের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়ার মোহাম্মদ খানও। তখন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বর্তমান আওয়ামী লীগ

১৯৬৪ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আবার পুনর্গঠন করা হয় আওয়ামী লীগ। ওই বছরের কাউন্সিল সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। আর সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে যান শেখ মুজিবুর রহমান।

এরপর ১৯৬৬ সালের মার্চে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে প্রথমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। সেই নেতৃত্বের হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে শুরু করে স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী দলটি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা; হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। এরপর তার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, মাত্র ১১৬টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে সংগঠনটি। এর দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতা আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২০০৮ থেকে ২০২৩—টানা ১৪ বছর শাসন করে যাচ্ছে এই রাজনৈতিক দলটি। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ রূপ নিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৯ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রুরা ওত পেতে আছে

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গ্রেপ্তার

‘গণহত্যায় উসকানিদাতা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে’

জাবিতে গণধোলাইয়ের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য

বৈদেশিক ঋণ আবার ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌবাহিনীর ২শ’ সদস্য

সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

১০

ডিপিডিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতির নতুন কমিটি

১১

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়ে আলী রীয়াজের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১২

আলজাজিরার অনুসন্ধান / যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

১৩

রূপপুর পারমাণবিকের প্রথম ইউনিটে ডামি ফুয়েল লোডিং শুরু

১৪

মহেশখালী থেকে অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছে নৌবাহিনী

১৫

নকল সোনার মূর্তি দিয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২

১৬

কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রবাসী যুবক নিহত

১৭

ভুল সংশোধনী ও দুঃখ প্রকাশ

১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যানজট নিরসনে পুলিশের অভিযান

১৯

মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন গৃহবধূ শারমিন

২০
X