ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল। ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
আন্দোলনে অনৈক্য ও ভাঙন দেখা দিলে এটি চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করীমের নেতৃত্বে একক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ২০০৮ সালে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতায় পড়ে দলটি। এরপর পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
পরে দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় এবং হাতপাখা প্রতীক লাভ করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বর্তমান আমির সৈয়দ রেজাউল করীম, নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং মহাসচিব ইউনুস আহমাদ। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের উদ্যোক্তা ছিলেন। তবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বাধার মুখে পড়ে সরে দাঁড়ান তিনি।
শুরুর দিকে আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ইসলামী যুবশিবির, আজিজুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশ, সৈয়দ ফজলুল করীমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি, আবদুল জাব্বারের নেতৃত্বে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ ছাড়া এ আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন ইত্তেহাদুল উম্মাহর নেতা হিসেবে আবদুল আহাদ মাদানী ও নোয়াপাড়ার পীর খাজা সাঈদ শাহ।
প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই অনৈক্য দেখা দেয় দলের মধ্যে। ১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর মৃত্যু হয় আবদুর রহিমের। পরে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। তবে ব্যারিস্টার কোরবান আলীর নেতৃত্বে একটি অংশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে থেকে যায়। আর হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই ঐক্য থেকে বের হয়ে যায় আরেকটি অংশ।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন এবং যুবশিবিরের যৌথ বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামে নতুন দল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। শেষে ইসলামী চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন একক দলে পরিণত হয় শাসনতন্ত্র আন্দোলন। দলটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে ১৯৯১ সাল থেকে। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর দলটি সাতটি ইসলামী দল নিয়ে গঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে ২০০২ সালের জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেয় দলটি। ওই নির্বাচনে তারা ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
এরপর ২০০৮ সালে দলটি প্রথমবারের মতো এককভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে তারা ১৬০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এবং পেয়েছিল ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৯ ভোট। সেটি ছিল মোট ভোটের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিভিন্ন দলের মতো ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ইসলামী আন্দোলন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সর্বোচ্চ মনোনয়ন দেওয়া দল হিসেবে বিবেচিত হয় দলটি। সেবার ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে তারা। তবে আইনি জটিলতায় তাদের এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ‘ইসলামী খেলাফতে’র মডেলভিত্তিক সমাজ বানাতে চায় ইসলামী আন্দোলন, যেন বাংলাদেশ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে রয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী যুব আন্দোলন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।
মন্তব্য করুন