তামাক থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয় তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায়। এ খাতে রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’র আয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাছরিন আকতার।
এসময় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার তামাকের বার্ষিক ক্ষতিসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি।
রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সংসদে তামাকবিরোধী লোকের চাইতে তামাকের পক্ষের লোকই বেশি। প্রকাশ্যে ধূমপান করা যাবে না, এই আইন আগেও ছিল। তার প্রয়োগ কি হয়েছে? আইন হলেই সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না। অনেক আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই।
শ্যামল দত্ত আরও বলেন, জাতীয় সংসদে সংবাদ কাভার করতে গিয়ে দেখেছি, বিড়ির পক্ষে আমাদের সংসদ সদস্যদের অনেকে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। বিড়ির ওপর ট্যাক্স বাড়ালে না কি বিড়ি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এজন্য তামাকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মিয়া বলেন, টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্য মতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে এখনই।
সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু তাই নয় বন্ধ করতে হবে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি। পাশাপাশি তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার ৫০ ভাগ থেকে ৯০ ভাগ এ বৃদ্ধি করা এবং বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) পরিচালক (অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণ) শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, রিয়াজ আহমদ, জুলহাস আলম, লোটন একরাম, শাহনাজ বেগম পলি, মো. আব্দুস সালাম মিয়া, হুমায়রা সুলতানা, আতাউর রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন