জ্বালানি খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ্যের নামে অপচয় করার সামর্থ্য দেশের নেই উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, আমরা পই পই করে খুঁজছি কোন জায়গা থেকে একটা ডলার বাঁচানো যায়। কিন্তু সেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, আমরা এক ধরনের জ্বালানি সংকটে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি না করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। জ্বালানি খাতে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডলার অপচয় বন্ধ না করতে পারছি, বিকল্প জ্বালানি না খুজঁতে পারি তাহলে ডলার ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। ডলার সংকট বাড়তে থাকবে যদি না আমরা বিকল্প জ্বালানিতে যাই। ঋণ করে কয়েক মাসের সংস্থান করতে পারব, কিন্তু আমার সংকটটা লম্বা।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি পরিবর্তনের স্রোত : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ শীর্ষক ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রকাশ করেছে। ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে বিবরণী প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণীর বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বিপিডিবি ইনস্টলড বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করেছে। সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনে অগ্রগতি সত্ত্বেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে স্মার্ট গ্রিড এবং আধুনিক ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাস কূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের আরও অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চমূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। রিনিউএবেল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।
ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বেসিরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা যখন সন্ধিহান থাকেন তারা বিনিয়োগ করবেন কি না ওই দেশে, সরকার তাদেরে পেমেন্টগুলো দিতে পারবে কি না সেক্ষেত্রে সরকারকে গ্যারান্টি দিতে হয়। তখন সরকার থেকে বলা হয় তুমি করো। বিদ্যুৎ যতটুকু তুমি দিতে পারবে ততটুকুই না, নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার না করলেও তোমাকে আমি টাকা দিব। সেই হিসেবে আমরা মনে করি ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, সেই সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল। তখন আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাত উদ্বৃত্ত হয়েছে। উদ্বুত্ত থেকে এখন বাহুল্য হয়েছে। এটা বাহুল্য বা মাথা ব্যথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিমাণ উদ্বৃত্ত আপনার দরকার নেই। এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতাই নেই। এখন ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এটি একটি বড় রকমের অপচয়। এই অপচয় নেবার মত সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতির নেই।
তিনি আরও বলেন, সংকটপূর্ণ জ্বালানি পরিস্থিতির জন্য ৭টি বিষয় আমরা তুলে ধরতে পারি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল জ্বালানি নিরাপত্তা। আলোচ্য সময়ে প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে, জ্বালানি আমদানির অসমার্থ্য দেখতে হচ্ছে। কয়লা ব্যবহারের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। জ্বালানি রূপান্তরে সরকার উল্টো যাত্রা করছে। জ্বালানি সঞ্চালন ও বিতরণের ইতিবাচক হলেও তা অপর্যাপ্ত। এলএনজি আমদানির প্রবণতা বাড়ছে। এলএনজি অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।
মন্তব্য করুন