দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’-এর নতুন ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনায় গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে স্মরণ করে ২০১৪ সালের ১৭ মে দক্ষিণের শহর খুলনাতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় গণহত্যা জাদুঘর ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, চিত্রশিল্পী হাশেম খানসহ বাংলাদেশের সিভিল সমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হচ্ছে গণহত্যা জাদুঘর।
খুলনা নগরীর ময়লাপোতো মোড় এলাকার ৩৩৪ শের-এ-বাংলা রোডস্থ ভবনে যাত্রা শুরু করে গণহত্যা জাদুঘর। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে বাড়িসহ একটি স্থায়ী জমি বরাদ্দ করেন। এই জায়গাতেই সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে বর্তমানের ৬ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গণহত্যা জাদুঘর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গণহত্যা জাদুঘরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে মাইক (বুলেট) ব্যবহার করেছিলেন সেটাও গণহত্যা জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ পঁচিশ মার্চ রাতে দেশ ছাড়ার পূর্বে স্ত্রীর কাছে লিখিত ঐতিহাসিক চিরকুটটিও প্রদর্শিত হচ্ছে। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিদর্শন নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শহিদ বুদ্ধিজীবী গ্যালারি। একাত্তরের ঘাতক ও পাকিস্তানি দোসরদের নানা দলিলাদিও প্রদর্শিত হচ্ছে জাদুঘরে, যেন এই প্রজন্ম জানতে পারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসররা কী করেছে এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সাথে।
গণহত্যা জাদুঘর কেবল প্রদর্শনই করছে না, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গড়ে তুলেছে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি আধুনিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সারা দেশে গণহত্যা বধ্যভূমির জরিপ চালানো হচ্ছে। চালু করা হয়েছে প্রশিক্ষণ কোর্স। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। গণহত্যার জিপিএস ম্যাপ তৈরি করেছে। গুগল ম্যাপেই গণহত্যার নিখুঁত পট ও ইতিহাস যে কেউ জানতে পারবেন। একটি বৃহৎ আর্কাইভ ও লাইব্রেরিও রয়েছে জাদুঘরে। গণহত্যা জাদুঘর নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করেছে, যা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সহায়তা করেছে। জাদুঘরের নতুন ভবনের তিন তলা প্রদর্শনী গ্যালারি। পাশাপাশি একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম রয়েছে।
মন্তব্য করুন