গাজীপুরে নারী পোশাক শ্রমিক আঞ্জুয়ারা বেগমকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
একইসঙ্গে বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনুযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমনে বর্বরোচিত হামলা, গুলি ও লাঠিচার্জে শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তারা বলেন, বুধবার সকালে গাজীপুরের সহিংসতায় একজন নারী শ্রমিক নিহত হয়। আমরা মনে করি ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়।
নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে বলেন, গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের একটি গর্বের বিষয়। এই গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পের রূপকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে এই খাতটি সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে এই খাতকে আজকে দুর্বল করেছে। ফলে বহির্বিশ্বের অনেক দেশ আজকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে নানাবিধ কারণে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
তারা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, কিছুদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকার মিরপুর, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের গার্মেন্টস শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছেন। বর্তমানে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মাসিক যে মজুরি পান তা দিয়ে একটি সংসারের থাকা খাওয়াও অসম্ভব। সেইসঙ্গে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামের কারণে শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের জীবনযাপন দুর্বিষহ। অথচ ক্ষমতাসীন সরকার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে বাঁচার মতো ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ না নিয়ে গত মঙ্গলবার ১২,৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে ঘোষণা দিয়েছেন সরকার যা গ্রহণযোগ্য নয়।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ঘোষিত মজুরি কাঠামোর প্রতিবাদে এবং ২৫ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা গাজীপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিল, মালিকের স্বার্থে শ্রমিক আন্দোলন দমনে নিষ্ঠুরভাবে মাঠে নেমেছে পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, টিয়ারগ্যাস ও গুলি চালালে এতে আঞ্জুয়ারা বেগম নামে একজন নারী পোশাক শ্রমিক নিহত ও অসংখ্য শ্রমিক আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহেও রাসেল হাওলাদার ও ইমরান নামের দুজন শ্রমিককে হত্যা ও অসংখ্য শ্রমিককে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। ফলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করলেও শ্রমিকদের স্বার্থে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। সম্প্রতি মালিক পক্ষ ১২,৫০০ টাকা মজুরির ঘোষণা করেছে যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।
তারা আরও বলেন, পুলিশ দিয়ে দমনপীড়ন চালিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ন্যায়সংগত আন্দোলন বন্ধ করা সমীচীন নয়। এক্ষেত্রে উচিত অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায়সংগত মজুরির দাবি মেনে নেওয়া। এটা শ্রমিক ও শিল্পের জন্যও মঙ্গলজনক। তা না হলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অসন্তোষ নিরসন হবে না। নেতৃদ্বয় অবিলম্বে শ্রমিক হত্যার বিচার ও নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা এবং শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।
মন্তব্য করুন