বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব আনায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাকিস্তানি শাসকেরা কখনোই ক্ষমা করেনি। তারই ফলশ্রুতিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ২৯ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বন্দি করে এবং এপ্রিল মাসে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একজন দেশপ্রেমিককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে তিতাস পারের মানুষটি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চিত্রনাট্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরমা দত্ত এমপি বলেন, আমার দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম তিতাস নদীর পাড়ে। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আছেন। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনই দুটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন দাদু। এর একটি উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানান। এর মাত্র দু’দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রস্তাবের সপক্ষে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বক্তব্য উত্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইন-সভায় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, গণপরিষদের সহ-সভাপতি ফরিদপুরের মৌলভী তমিজউদ্দীন খান ও পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমুদ্দীন এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যুক্তি দিয়ে তাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ মানুষের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষের ভাষা বাংলা। সেক্ষেত্রে বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা। তাকে শুধু প্রাদেশিক ভাষা বলে অবহেলা করা যায় না।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমানের যে সমাজ, এই সমাজকে ধ্বংস করার জন্য একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে হত্যা করেছিল, সাধনা ঔষধালয় রসায়নের গবেষক ড. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, কুমুদিনী ট্রাস্ট এর রণদাপ্রসাদ সাহাকেও ওরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণপরিষদের পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি করাচি থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে ২৫ ফেব্রুয়ারি এসে নামলে ছাত্র সমাজ তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুও উপস্থিত ছিলেন।
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একজন দেশ প্রেমিক ছিলেন। তার নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধীরেন্দ্রনাথ ভাষা চত্বর করা হয়। যেটা স্বাধীনতা বিরোধীরা পুড়িয়ে দিয়েছিল।
বুদ্ধিজীবী ও লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সেই স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের চেয়ে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান, দেশ প্রেম তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
তিতাস নদীর পারের মানুষটি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চিত্রনাট্যটি পরিচালনা করেছেন তানভীর মোকাম্মেল।
মন্তব্য করুন