বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মূল্যস্ফীতি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মানুষ এ কারণে বিপর্যস্ত।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শোভন কাজ ও সামাজিক সুরক্ষা, সবার জন্য সমান মর্যাদা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে এনজিওদের সমন্বয়কারী ও প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এডাব এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সভায় আতিউর রহমান বলেন, নতুন করে আবার সংকট তৈরি হচ্ছে। একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ। এখন আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ। তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সাপ্লাই চেইন আরও বিপর্যস্ত হবে বলে মনে হচ্ছে। আমদানির প্রত্যেকটা পণ্যের দাম আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষিখাতে ভালো করছি বলে আমরা দারিদ্র্য মোকাবিলা করতে পারছি। কিন্তু কৃষিও ভালো করতে পারবে না। কারণ আমদানি করা সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে কৃষিতে খরচ বেশি পড়ছে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক। তিনি বলেন, ক্ষমতায়ন মানুষের পছন্দ ও সুযোগ বাড়ায়। ক্ষমতায়ন হলে দারিদ্র্য হ্রাসে সুফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সম্পত্তির মালিকানায় নারীর অধিকার এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ। বর্তমানে কেবল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারীর সম্পদে মালিকানা রয়েছে। এই ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী সম্পদের ক্রয়-বিক্রয় বা সম্পদ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ১ কোটি ৮৬ লাখ নারী সরাসরি অর্থ আয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও মাত্র ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ নারী তার নিজস্ব আয়কৃত অর্থ ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ভোর থেকে মধ্যরাত নাগাদ কাজের মাঝে অবসরের সুযোগ পান না ৭ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। অন্যদিকে গৃহকর্মে নারীদের তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। নারীরা শুধু ঘর-গৃহস্থালী কাজে আর সন্তান লালনপালনে ব্যস্ত থাকবে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এডাবের ভাইস চেয়ারপারসন মাজেদা শওকত আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এনামুল কবীর রুপম। সভা সঞ্চালনা করেন এডাবের পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন।
বক্তারা বাংলাদেশের দারিদ্র্যের প্রকৃতি, দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওর ভূমিকা, শিশুর সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ দারিদ্র্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতি দরকার। যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে।
ইকোনোমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শারমিন রিনভী বলেন, সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েছে। মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতি বছর দারিদ্র্য চার শতাংশ কমে। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই দারিদ্র্য কি কমেছে?
বক্তারা বলেন, কারও একার পক্ষে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার ও এনজিওর একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। বক্তারা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন