সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালের ৭ জুলাই কলকাতায় বলেছিলেন- ‘এমন তো কথা ছিল না, পাকিস্তান দাবি করার পরও পাঞ্জাবিরা পাঞ্জাবি ভাষা, বেলুচরা বেলুচ ভাষায়, সিন্ধিরা সিন্ধি ভাষা, বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারবেন না। সবাই উর্দুতে কথা বলবে এমন তো কথা ছিল না।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দেশের আনাচে-কানাচে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে আসলে কি ৩০ লাখ শহিদ হয়েছে, তাহলে তা হবে শহিদদের প্রতি অবমাননা ।
শনিবার (১ অক্টোবর) সকালে '১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর' এর উদ্যোগে বাংলা একাডেমিতে 'বাংলাদেশ গণহত্যা স্মরণ ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : বহুমাত্রিকতার খোঁজে শীর্ষক দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সংস্কৃত প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. সজল নাগ। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং অন্যত্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রভাব মূল্যায়ন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম আধিপত্যশীল জাতীয়তার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ, নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদের ভেঙে বেরিয়ে আসার উদাহরণ হয়েছিল। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় নিপীড়ক রাষ্ট্রের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের বিজয়ের প্রতীক।
গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদেরের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কবি তারিক সুজাত।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে কথা দিয়ে কথা রাখার সংস্কৃতি ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি খুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গণহত্যা জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় একটি বাড়ি উপহার দেন। এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সেই জাদুঘর উদ্বোধনের অপেক্ষায়। গণহত্যা জাদুঘরের উপাদানের গায়ে লেগে রয়েছে শহিদের রক্তের দাগ।
সভাপতির বক্তব্যে গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, পাকিস্তানি হানাদাররা বলেছিল, বাঙালি কন্যাদের গর্ভে এমন সন্তান জন্মাবে যারা জন্ম নিয়েই বলবে জয় পাকিস্তান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পুত্রের সামনে মাকে ধর্ষণ, পিতার সামনে কন্যাকে ধর্ষণ করেছে। যারা বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে তাদের চামড়া ছিলে নুন দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। মায়েরা কিশোরদের পাঠিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য। অনেকের ৫টি সন্তানই যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। একজন কিশোরকে পাকিস্তানি হানাদার ধরে এনে বলছে পাকিস্তানি জিন্দাবাদ। কিশোরটি বলছে জয় বাংলা। তখনি তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
সম্মেলনে মোট তিনটি কর্ম অধিবেশনে ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ২০ জন গবেষক মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বাংলাদেশের নানা দিক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ভারতের কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় আগত অতিথিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন।
জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন, নতুন প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন এবং জাদুঘরে স্মারক হস্তান্তর করা হয়।
মোট তিনটি কর্ম অধিবেশনে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন সঞ্জয়কে অব দাস, ড. কিংশুক চ্যাটার্জি, ড. সাগর তরঙ্গ মণ্ডল, ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। সভাপতিত্ব করেন শাহরিয়ার কবির। দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুনম মুখার্জি, ড. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ড. শম্পা ঘোষ, সুপ্রিতা আচাষী। সভাপতিত্ব করেন হাশেম খান। তৃতীয় কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. অনি মোহাম্মদ ফায়েক-উজ্জামান, আবদুস সামাদ গায়েন, ড. মো. মাহবুবর রহমান, ড. মো. আহসানুল কবির। সভাপতিত্ব করেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সমাপনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সমাপনী বক্তব্য দেন লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক,অনিন্দিতা ঘোষাল, কিংশুক চ্যাটার্জি ও মুর্শিদা বিনতে রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে ভারতীয় বিখ্যাত পরিচালক কৃষ্ণেন্দু বোসের পরিচালনায় নির্মিত 'বে অফ ব্লাড' প্রদর্শিত হয়।
মন্তব্য করুন