অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া, সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা অবসানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের জন্য ইশতেহারে দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ, দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
পাশাপাশি অতীতে যে সব ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত তাদের আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত পরিষদের বর্ধিত সভা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। সভায় দেশের তিনটি স্থানে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। সেই সঙ্গে আসন্ন দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের পরামর্শ অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোকে ২৫ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে।
আগামী ১৪ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে দেবীপক্ষের শুভ সূচনায় ধ্বনিত হবে আনন্দময়ীর আগমনী বার্তা। ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী। ২৪ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বৈঠকে উত্থাপিত রিপোর্টে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত ৩০টি সাম্প্রদায়িক হামলার বিবরণ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে দুর্গোৎসব উপলক্ষে ২৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল ও বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। শাখা কমিটিগুলোকেও স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বর্ধিত সভা থেকে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফার অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু আইন বর্তমান সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়ন করা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইনকানুন বাতিল করা, হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে দ্রত আইন প্রণয়ন; টোল, হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করে ধর্মীয় শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত করা।
ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করলেও সাম্প্রদায়িক শক্তি নানা অজুহাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর প্রায়ই নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অনেকেই এইসব সংঘবদ্ধ আক্রমণে সামিল হচ্ছেন।
তিনি বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দুঃখজনক বাস্তবতায় ‘নির্বাচন ও নির্যাতন’ ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী নির্বাচনের পূর্বাপর শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের জন্য বর্তমান সরকার এবং সকল ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাযথ ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানাই।
তিনি বলেন, বিশেষ করে অতীতে যে সকল ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ন্যক্কারজনক ভূমিকা রেখেছে, তাদের নির্বাচনে প্রার্থিতা না করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিনীত আহ্বান জানাই। তাছাড়া আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা চলাকালীন সময় কোনো ধরনের কর্মসূচি না দিতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে, এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক স্বপন সাহা, মনীন্দ্র কুমার নাথ, অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, জয়ন্ত সেন দিপু, তাপস কুমার পাল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন