ঢাকা শহরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। তাতেই ভয়াবহ যানজটের কারণে গাড়ির গতি হাঁটার গড় গতির নিচে নেমে গেছে। এ শহরে শিশুদের খেলার জায়গা নেই, মানুষের আবাসস্থলের সংকট রয়েছে, সেখানে গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে নগরের যাতায়াত পরিকল্পনা যুক্তিযুক্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খিলগাঁওয়ে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত সামাজিকীকরণ এবং বিনোদনের জন্য শিশুদের খেলাধূলার আয়োজন ও গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচি থেকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে দীর্ঘ সময় গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। কখনো আবার ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এ শহরে শিশুদের খেলার জায়গা নেই, কিন্তু যথেচ্ছ পার্কিংয়ের সুযোগ আছে। কম ব্যস্ত সড়কগুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের পরিবর্তে দিনের নির্দিষ্ট সময় শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে প্রাইভেটকারের ব্যবহার বৃদ্ধি যানজটের অন্যতম কারণ। যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে সময়, অপচয় হচ্ছে অতি মূল্যবান জ্বালানি এবং দূষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক ও বসবাসের পরিবেশ। সড়ক গাড়ির জন্য নয়, বরং এটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর।
পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর বলেন, ঢাকায় পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই, যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে অন্তরায়। গাড়িমুক্ত সড়ক এক্ষেত্রে খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করতে পারে। যানজট হ্রাসে কিছু সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা এবং সপ্তাহে একদিন শহরব্যাপী ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
পল্লীমা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, যাতায়াত পরিকল্পনায় যান্ত্রিক যানবাহন যেভাবে প্রাধান্য পায়, হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত সেই গুরুত্ব পায় না। ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিটি পরিষেবা দুই-তিন কিলোমিটারের মধ্যে পাওয়া যায়। হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ পেলে জনগণ স্বল্প দূরত্বে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে আর আগ্রহী হবেন না।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৬৪৯৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি এ শহরে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ধারা অব্যহত থাকলে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়বে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাস সার্ভিস উন্নয়ন এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন