এডিস মশার প্রজননস্থল সম্পর্কিত কিংবা প্রজননস্থল সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে এমন তথ্য দিলে সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশককর্মী উপস্থিত হয়ে এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মূল করবে বলে জানিয়েছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
দক্ষিণ সিটির বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তথ্য দেওয়ার পরে ১৫ মিনিটের মধ্যে যদি মশককর্মী যেতে না পারে তাহলে আমি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আপনার কাছে হাজির হয়ে ক্ষমা চাইবো।
আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার ফকির চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে ‘৪১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ উন্নয়ন উৎসবে’ যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমার যে অঙ্গিকার, প্রতিশ্রুতি -- আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যদি আপনারা তথ্য দেন, স্টপ ওয়াচে ১৫ মিনিট সময় নিবেন, ইনশাআল্লাহ আমার মশককর্মী সেই জায়গায় উপস্থিত হয়ে যাবে। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মূল করবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে আমি সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।’
নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা প্রতিদিনের পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি যে, সারা বাংলাদেশে এখন দৈনিক প্রায় তিন হাজার রোগী হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গত সাত দিনে গড়ে পঞ্চাশের উপরে রোগী পাওয়া যায়নি। গতকাল আমরা রোগী পেয়েছি ৫২ জন। তার আগেরদিন আমরা পেয়েছি ৫৪ জন। তার আগেরদিন সে সংখ্যা ছিল ৪৮ জন। আমরা কাজ করে চলেছি বলেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু তা পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্য আপনাদের সহযোগিতা আশা করছি। আপনাদের সামগ্রিক ও ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা ছাড়া আমরা পূর্ণরূপে এডিস মশা নির্মূল করতে পারবো না।’
শেখ তাপস বলেন, ‘আপনার নিজ বাড়ি, আঙিনা, ছাদ ও ছাদবাগান এবং নির্মাণাধীন ভবন আপনারা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে পরিষ্কার করবেন। তারপরও আপনাদের যদি নজরে আসে এবং কোনো আশঙ্কা থেকে থাকে, পাড়া-প্রতিবেশীর কোনো বাড়ি বা স্থাপনায় পানি জমে আছে। সেখানে লার্ভা হতে পারে। আপনারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে, আমাদের কাউন্সিলর কিংবা মশক সুপারভাইজারকে তথ্য দিবেন। ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের মশককর্মী সেখানে হাজির হবে এবং সেটা পরিষ্কার করবে। সেখানে লার্ভিসাইডিং করবে, ফগিং করবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছেএবং প্রতিটি রোগীর ঠিকানা নিয়ে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একজন রোগীও বলতে পারবে না যে, তার ঠিকানা পাওয়া সত্ত্বেও আমরা কোনো কার্যক্রম বা উদ্যোগ গ্রহণ করিনি বলে জানান মেয়র।
ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও এডিস মশার প্রজননস্থল নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে যে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে তার ফোন নাম্বার হলো ০১৭০৯৯০০৮৮৮।
কাউন্সিলরদের এক কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের যে সীমা রয়েছে তার আওতায় ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চিনি ঠিকরা মসজিদ লেন, দক্ষিণ মুহসেন্দী বড় মসজিদ লেন, ১৮৬ লাল মোহন সাহা স্ট্রীট লেন, ৫৫ লাল মোহন সাহা স্ট্রীট লেন, মুসলিম গভঃপ্রাইমারি স্কুল লেন এবং ৪৪ লাল মোহন সাহা স্ট্রীট লেন পর্যন্ত সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উত্তর মৈশুন্ডি হতে ৭ শশী মোহন বসাক লেন, ২৯ জোড়পুল লেন হতে ৪৬/৬ লাল মোহন সাহা স্ট্রীট, জোড়পুল বাই লেন ১৩নং হতে ১৩৪নং ও ২৩নং হয়ে ১৬/২ হয়ে ২৩/১ পর্যন্ত এবং জোড়পুল ৫/১ হয়ে ৪৩নং জোড়পুল হতে ৪৬ উত্তর মুহসেন্দী বাই লেন পর্যন্ত সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ভজহরি সাহা স্ট্রীট রোডে আরসিসি নর্দমাসহ রাস্তার মেরামত ও উন্নয়ন এবং আব্দুর রহিম কমিউনিটি সেন্টার হতে ভজহরি সাহা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওয়ারী এলাকার নবাব স্ট্রীট বলদা গার্ডেনের পেছনে ৩১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রশস্ততা বিশিষ্ট নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও ডিসিএনইউপি প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফকির চাঁন কমিউনিটি সেন্টার এবং ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়ারী কমিউনিটি সেন্টার (আব্দুর রহিম কমিউনিটি সেন্টার) নির্মাণে দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং শীঘ্রই সেসব কাজ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে করপোরেশনের সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সময় উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ জারি গানসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক গান পরিবেশন করেন।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলোর আয়োজন ও সভাপতিত্বে এবং করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, কাউন্সিলরদের মধ্যে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মারুফ আহমেদ মনসুর, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোকন উদ্দিন আহমেদ, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আরিফ হোসেন ছোটন, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান ইমন, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শামসুজ্জোহা, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুদ মোল্লা, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রুহুল আমিন, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের সালাহউদ্দিন আহম্মেদ এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহিনুর বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন