কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৫ পিএম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশ কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা

ডিআইজি মিজান, এসপি মোকতার, এডিসি সাকলাইয়েন ও এডিসি হারুন। ছবি : সংগৃহীত
ডিআইজি মিজান, এসপি মোকতার, এডিসি সাকলাইয়েন ও এডিসি হারুন। ছবি : সংগৃহীত

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তায় ভূমিকা রেখে চললেও গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তার জন্য বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। বিভিন্ন সময়ে ঘুস, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম সামনে আসলেও সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তার নারী কেলেঙ্কারির তথ্য বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

অতিসম্প্রতি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের সঙ্গে ডিএমপির সদর দপ্তরে কর্মরত সানজিদা আফরিন নিপার অনৈতিক সম্পর্কের গুঞ্জন। এর জের ধরে সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাঁধে এডিসি হারুনের। যার ভিডিও ক্লিপ পর্যন্ত ছড়িয়েছে সামাজিকমাধ্যমে। এদিকে ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। ওই ঘটনার পর এডিসি হারুনকে রংপুরে বদলি করা হয়। সবশেষ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে।

গত কয়েক বছরে পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নারীঘটিত কেলেঙ্কারি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিআইজি মিজান, পুলিশ সুপার মুক্তা ও এডিসি সাকলায়েন। যার সর্বশেষ সংযোজন এডিসি হারুন।

এর আগে ২০১৭ সালে জিআইজি মিজানের ঘটনা বেশ আলোচনায় জন্ম দেয়। ওই বছরের জুলাই মাসে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকো নামের এক নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এমনকি সেই বিয়েতে শর্ত দেওয়া হয় যেন, বিয়ের খবর ২০১৯ সাল পর্যন্ত গোপন রাখে ইকো। তবে শর্ত ভেঙে বিয়ের খবর প্রকাশ করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ইকোকে গ্রেপ্তার করান তিনি। এমনকি বগুড়া, রমনা ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে ব্যবহার করে ওই নারী ও তার পরিবারকে হয়রানি করেন ডিআইজি মিজান। ইকোর লালমাটিয়ার বাসা তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, লেখাপড়া ও চাকরিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র। যে ঘটনায় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই সময়ে পাওয়া যায় ডিআইজি মিজানের আরও বেশ কয়েকটি নারী কেলেঙ্কারির তথ্য। যেখানে সংবাদ পাঠিকাসহ বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন ইকো ও তার মা। এমনকি ওই পুলিশ কর্মকর্তার ফাঁদে পড়ে অনেক নারীর সংসার ভেঙেছে দাবি করে বিভিন্ন ফোনালাপের রেকর্ড সংবাদমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারী। এর জের ধরে অবৈধ সম্পদের তদন্তে নামে দুদক। দুদকের করা মামলায় ডিআইজি মিজানকে ১৪ বছরের সাজা দেন আদালত।

২০১৯ সালের মে মাসে সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে থাকা অবস্থায় এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন। দেশে আসার পর এসপি মোকতারকে পিবিআইয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। দেশে ফিরে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই নারী। পরে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে থানাকে নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।

২০২১ সালে চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় সামনে আসার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয় তাকে। এর আগে পরীমণির বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা একটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই মামলার সূত্র ধরেই এডিসি সাকলায়েনের পরীমণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং ঘুস নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় সহকারী পুলিশ সুপার মোহা. আবদুর রকিব খানকে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা গত দুয়েক বছরে কয়েকটি ঘটনা দেখলাম। পুলিশের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নৈতিক স্খলনের কারণে পেশাদারিত্ব হারিয়ে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এডিসি হারুন, এসপি মোকতার বা এডিসি সাকলায়েন কিংবা অন্য যাদের কথাই বলুন তারা আদর্শ ও নীতিবান পুলিশ হয়ে উঠতে পারেননি। শুধু নারী কেলেঙ্কারিই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও পুলিশের এমন নীতি-আদর্শচ্যুতির উদাহরণ আছে। তারা মনে করেছেন, একটা সুযোগ যেহেতু পেয়েছি সেটা কাজে লাগাই। আমি পুলিশ, আমাকে কোথাও জবাবদিহি করতে হবে না, কেউ আমার কাছে জবাবদিহি চাইবেও না। কারণ তারা আমার পরিচয়, পোশাক ও অস্ত্রকে ভয় পাবে। এসব কারণেই কখনো কখনো তারা জোর করেই কোনো সহকর্মী অথবা অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন। আবার কখনো কখনো ওই পুলিশ ও নারী দুজনই নিজের ইচ্ছায় সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তাদের এই নৈতিক স্খলনের কারণে তৃতীয় কেউ ভিকটিম হয়েছে। এমনকি কেউ সহিংসতার শিকার হয়েছে, আত্মহত্যা করতে হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: এডিসি হারুন-সানজিদাকান্ড
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘মহসিন বিয়ে না করলে, এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব’

 টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেলেন রুশনারা আলী

পেনাল্টি মিস আর চোট নিয়ে কী বললেন মেসি

স্ত্রীর সামনে কৃষকলীগ নেতাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

অধ্যক্ষের ছেলের বিয়ে / ৫০০ টাকা উপহার প্রসঙ্গে শিক্ষকদের প্রতিবাদ

শ্রীমঙ্গলে বাড়ছে আগাম জাতের আনারস চাষ

এত দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান না দিবু

লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়

প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পদ্মায় জেলেদের থেকে চাঁদা উত্তোলন!

টাইব্রেকে হার মানেন না মার্তিনেজ

১০

নৌকা ডুবে মাদ্রাসাছাত্রী নিখোঁজ

১১

সরকারি ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চলছে মহোৎসব

১২

বিপুল ভোটে বিজয়ী টিউলিপ সিদ্দিক

১৩

অবশেষে মুখ খুললেন মতিউরের স্ত্রী লাকী

১৪

সাতসকালে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষ, ঝরল ৫ প্রাণ

১৫

ফেসবুকের এক পোস্টকে কেন্দ্র করে চার পরিবার সমাজচ্যুত

১৬

মার্তিনেজের বীরত্বে সেমিতে আর্জেন্টিনা

১৭

আজ গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

১৮

শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রামপুলিশ গ্রেপ্তার

১৯

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন : বুথফেরত জরিপ যা বলছে

২০
X