এখন থেকে বিদ্যমান বাংলা সনের পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে অর্থবছরে (জুলাই-জুন)। এমন বিধান যুক্ত করে গতকাল রোববার ‘ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩’ পাস হয়েছে।
এর আগে বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সদস্যদের আনা জনমত যাচাইবাছাইয়ে কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স রদ করে নতুন এ আইনটি পাস করা হয়।
তবে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলায় এ আইন কার্যকর হবে না।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় সদস্যরা ভূমি অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের যেসব সেক্টরে দুর্নীতি হয়, তার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম। এরজন্য দায়ী ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, জরিপের নামে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। যেখানেই শুরু হয় জরিপ, সেখানকার মানুষ হয় গরিব।
এসব সমালোচনার জবাবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষকে এসব হয়রানির থেকে রেহাই দিতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইনে রাজস্ব আদায়ের কাজ শুরু হওয়ায় অনেক হয়রানি কমে আসছে। প্রতিদিন সরকার অনলাইনেই পাঁচ কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব পাচ্ছে। এটা বিশাল অগ্রগতি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, একাধারে তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা হলে প্রথম থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে জরিমানা হবে। তৃতীয় বছর শেষে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর সার্টিফিকেট মামলা করে আদায় করা হবে।
বিলে বলা হয়েছে, কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবারভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষি ভূমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলা সন (বৈশাখ-চৈত্র) হিসাবে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে জুলাই-জুন অর্থবছরের হিসাবে। প্রতিবছর জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর জরিমানা ছাড়া দেওয়া যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, আখ ও লবণ চাষের ভূমি এবং কৃষকের পুকুরও (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ব্যতীত) মওকুফের আওতায় থাকবে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি ভূমি পল্লি এলাকা বা পৌর এলাকা যে কোনো স্থানে অবস্থিত হোক, সব ক্ষেত্রে অভিন্ন ভূমি উন্নয়ন কর হার ও শর্ত প্রযোজ্য হবে। সরকার যে কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণির ব্যক্তিরা বা সংস্থার উন্নয়ন কর মওকুফ করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবছর জুলাইয়ের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে ভূমির ব্যবহারভিত্তিক অবস্থা বিবেচনায় নির্ধারিত ফরমে সব মৌজার ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে, তা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার তা পরীক্ষা করে অনুমোদন করবেন। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা যাবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতি সারা দেশে পূর্ণরূপে প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে যে কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা নিতে পারবে।
মন্তব্য করুন