নকল ঠেকাতে কসমেটিকস ব্যবসার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩’ সংসদে পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর আনা বিরোধীদলীয় সদস্যদের জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করা হয়। বিলে ঔষধের কৃত্রিম সংকট ও বেশি মুনাফার লোভে মজুত করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের অবৈধ ব্যবহারও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কসমেটিকস এবং ঔষধ দুটি ভিন্ন দ্রব্য। কিন্তু হঠাৎ করেই ঔষধ প্রশাসনের হাতে কেন দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের সেখানে ডাকা হয়নি।
১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন এবং ১৯৮২ সালের আইন দুটিকে এক করে যুগোপযোগী করে এই বিল আনা হয়েছে এমন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুই আইন একীভূত করে একটি করা হয়েছে। কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের উদ্দেশ্য নয়। মানুষের স্বাস্থ্য এবং ভেজাল ঔষধ ও কসমেটিকস প্রতিরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। বিলে বিউটি পার্লার বা অন্য কোথাও নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া মানবদেহে ফিলার, বোটক্স, গ্লুটাথিয়ন বা অন্য কোনো কসমেটিকস প্রয়োগ দণ্ডণীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
প্রস্তাবিত বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স অথোরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তুাবিত আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ঔষধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, নতুন ঔষধ, ভ্যাকসিন মেডিকেল ডেভেলপ করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, ওভার দ্য কাউন্টার ঔষধ ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো ঔষধ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল ডিভাইসকে ঔষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ঔষধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের তপশিলে ৩০ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করে সেগুলোর ক্ষেত্রে কী সাজা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
বিলের ওপর আলোচনা : বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে করতে পারছে না। ২৩৬ টি ঔষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুই করছে না। এরমধ্যে আবার তাদের কেন এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
জাপার আরেক সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের বাজারে পা্ওয়া দামী ব্র্যান্ডের কসমেটিকস কেরানীগঞ্জ ও জিন্জিরাসহ পুরনো ঢাকায় তৈরি হয়। এগুলো তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও আটা, ময়দা দিয়ে। ফলে এগুলো ব্যবহার করে মানুষ ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ জড়িত। এরমধ্যে বেশকিছু ধারা জনস্বার্থ পরিপন্থি হতে পারে। তাই বিলটি কোন পীর-দরবেশের স্বার্থে তড়িঘড়ি করে পাস করা ঠিক হবে না।
মন্তব্য করুন