কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ড. ইউনূস ইস্যুতে ৫০ সম্পাদকের বিবৃতি হতাশাজনক: ইউট্যাব

ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। ছবি : সংগৃহীত
ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। ছবি : সংগৃহীত

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা বিদেশিদের খোলাচিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের ৫০ জন বিশিষ্ট সম্পাদক যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে হতাশা প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে বলেন, একজন সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে সম্পাদকেরা নিরপেক্ষ পেশাজীবী হিসেবে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। এমনিতেই গত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভিন্নমতের নেতাকর্মী ও বরেণ্য ব্যক্তিদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টার্গেট করা হচ্ছে। ড. ইউনূসও সেই টার্গেটের শিকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগও বাদ যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিচারাঙ্গণে যা ঘটেছে সেগুলো আওয়ামী দলীয়করণের নগ্ন উদাহরণ। সুতরাং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা করা হয়েছে তা কল্পনাপ্রসূত।

ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২৩) প্রকাশিত বিবৃতিতে সম্পাদকেরা বলেন, ‘বিদেশিরা যে চিঠি দিয়েছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ......।’ আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি, এটা কোনোমতেই বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ নয়। কারণ দলীয়করণের কারণে বাংলাদেশর বিচার ব্যবস্থায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দেশের মানুষ বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা সবারই জানা। এক্ষেত্রে ড. ইউনূসও বাদ যাননি। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাছাড়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের মানুষের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারেনি। সরকার তার অনুগত প্রশাসনযন্ত্রকে দিয়ে দিনের ভোট রাতেই কেটেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক না হলে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে। ভিসানীতির আওতায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাও থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরই সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার কিছু অনুগত আমলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দায়ের করে তাকে হয়রানি ও তার সুনাম ক্ষুন্ন করছে।

তারা বিবৃতিতে বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ যখনই সঙ্কটে পড়েছে তখনই গণমাধ্যম ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সাংবাদিক সমাজের ভুমিকা ছিল অতুলনীয়, প্রশংসনীয় এবং অনস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েকবছর পরই তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার দেশে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। সেসময় ৪টি বাদে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। সেই বাকশালের সময়ও কিন্তু গণমাধ্যম তাদের ভুমিকা রেখেছে। এরপর নব্বইয়ের দশকে এইচএম এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ যে ভুমিকা রেখেছে সেটা ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে আছে। এরশাদ সরকারের পতনের দাবিতে সেসময় চূড়ান্ত আন্দোলনের একপর্যায়ে সাংবাদিক সমাজ এরশাদের সংবাদ পরিবেশনও বর্জন করেছিল।

ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে। এই সঙ্ককটালে সাংবাদিক সমাজ ও গণমাধ্যম তাদের যে ভুমিকা রাখার কথা সেভাবে রাখতে পারছে না। সাংবাদিক সমাজকেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিধাবিভক্ত করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বহু কালাকানুন গণমাধ্যমের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দেশের সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি পেশাজীবী সমাজ হিসেবে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের উচিৎ তাদের স্বাধীনতার বিষয়ে আরো বেশি তৎপর হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে বিদেশিদের খোলা চিঠির প্রতিবাদে বাংলাদেশের ৫০ জন সম্পাদক যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমাদেরকে হতবাক করেছে। আজকে হঠাৎ করে ড. ইউনূস কেনো সরকারের টার্গেটের শিকার গণমাধ্যমের উচিৎ সে বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান সংবাদ জাতির সামনে তুলে ধরা। অথচ সে বিষয়ে সম্পাদকবৃন্দ কিছুই বলছেন না।

নেতৃদ্বয় বলেন, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ। দেশে-বিদেশে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্রদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়। আমরা অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার ও তাকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কোনো দুর্বৃত্ত-চাঁদাবাজকে আমরা জায়গা দিব না : নয়ন

দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি নিয়ে সমন্বয়ক হাসনাতের হুঁশিয়ারি

কুলাউড়ায় প্রস্তুত অনিন্দ্য সুন্দর শিববাড়ি মন্দির

‘রাজবাড়ীগুলো সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে’

ডিম-মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা লুট

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সুশীলতা’ দেখতে আমরা প্রস্তুত নই : সারজিস

‘দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে তিনি পালিয়ে যেতেন না’

শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার

ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত

‘মালয়েশিয়ায় বন্ধ শ্রমবাজার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’

১০

শহীদ মুগ্ধর নামে ভবন ও তোরণ উদ্বোধন

১১

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

১২

খরচ তোলা নিয়ে চিন্তিত শীতের আগাম সবজিচাষিরা

১৩

খালেদা জিয়ার জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে : কায়কোবাদ

১৪

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোকবার্তা

১৫

বিপিএলে সাকিবকে খেলাতে মুখিয়ে রংপুর

১৬

সিরাতের মঞ্চে আমির হামজা

১৭

ঝালকাঠিতে কাস্টমস কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর বাড়িতে ডাকাতি

১৮

নিরাপদ বাংলাদেশ চাই এর উদ্যোগে / আবরারের শাহাদাতবার্ষিকীতে ‘সংহতি সমাবেশ’ সোমবার

১৯

ম্যানসিটির অনুরোধে ইপিএলের না

২০
X