রাজধানীর ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতুর উত্তর দিকে চনপাড়া এলাকায় বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় চার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১১ জনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলার পক্ষে এ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।
নোটিশে বালু নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর মিলনস্থলে স্থানে নদী ধ্বংস করে ইকোপার্ক নির্মাণ বন্ধ ও নদীর সংযোগ সচল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বেলা উল্লেখ করেছে, রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে রাখা নদীগুলোর মধ্যে শীতলক্ষ্যা ও বালু অন্যতম। বালু নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর মিলনস্থলের পাশেই ডেমরা থানার সুলতানা কামাল সেতুর উত্তর দিকে চনপাড়া নামক স্থানে পলি জমে ছোট চরের আকার ধারণ করেছে। চরটির যার দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার এবং প্রন্থ ২০০ মিটার। এ স্থানটির পশ্চিম দিকে বালু নদ আর পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী। স্থানীয়ভাবে ‘চনপাড়া চর’ নামে পরিচিত। পলি জমে সৃষ্টি হওয়া ছোট চরটি নদী দুইটির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।
একসময় নৌ চলাচলের অন্যতম পথ ছিল শীতলক্ষ্যা নদী ও বালু নদ। বড় বড় নৌযানে এ পথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতো। নাব্যতা সংকটের কারণে নদীর উত্তর দিকের শেষ মাথা থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত নৌ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু কিছু পথে এখন কেবল বাল্কহেড আর ট্রলার চলাচল করে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে চনপাড়ার চরটি জেগে উঠলে স্থানীয়রা সেখানে মৌসুমি সবজি চাষাবাদ করে থাকে।
সম্প্রতি পলি জমে চরের আকার ধারন করা এ স্থানে ইকোপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মর্মে জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘নদীপাড় সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পের আওতায় পলি জমে চরের আকার ধারণ করা চনপাড়ার দুইটি নদীর মিলনস্থানকে ফোরশোর (তীরভূমি) দেখিয়ে সেখানে ইকোপার্ক নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চরটিতে যাতায়াতের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু তুলে চর উঁচু করার কাজ চলমান রয়েছে এবং চরের উত্তর দিকে বালু দিয়ে এ নদীর কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। ভরাটের পাশাপাশি ইটের পিলার নির্মাণের কাজও চলছে। ইকোপার্ক নির্মাণ সংক্রান্ত সেখানে বড় সাইনবোর্ডও দেখা গেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নদী দুইটির মাঝখানে অবস্থিত চনপাড়া নামক স্থানে ইকোপার্ক নিমিত হলে শীতলক্ষ্যা নদী ও বালু নদের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হবে এবং নদীর নাব্যতা কমবে। ইতোমধ্যে সেখানে উজান থেকে বহন করে আসা পলি জমা হয়েছে। পলি সরিয়ে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা না হলে চ্যানেলটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয় এমন কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালতের নির্দেশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা এ চারটি নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে যেখানে নদী বিরুদ্ধ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
আইনি নোটিশে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উত্তর দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ তা মানতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক কালবেলায় ‘চনপাড়া চরে ইকোপার্ক বানিয়ে নদী ধ্বংসের আয়োজন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মন্তব্য করুন