আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বড় শ্রমিক সমাবেশ করবে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দেশের শ্রমজীবী মানুষকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা উন্নয়নের কারিগরি সেই শ্রমিক বা মেহনতি মানুষদের দাবি বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসে না। এজন্য শুধু সরকার বা ট্রেড ইউনিয়ন এগিয়ে এলে হবে না। গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। তারা শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বেশ উপকার হয়।
তিনি বলেন, আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে আমরা বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে দেশের সব শাখায় উৎসবের সঙ্গে সমাবেশ পালন করব। ঢাকায় বড় রকম শ্রমিক সমাবেশ করব। আশা করছি লক্ষাধিক শ্রমিকের উপস্থিতি থাকবে ইনশাআল্লাহ। দেশের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে। শ্রমিকদের বিপদে পাশে থাকতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা সবাই মিলে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সুন্দর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, আমরা দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমিকের উন্নয়ন ও স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনে আমরা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। অতীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা ঠিকমতো কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। আমরা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও মানোন্নয়নের জন্য সবসময় পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ্।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অটোরিকশা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। প্রতিনিয়ত বাধাহীনভাবে রিকশা নামছে। এজন্য সরকারকে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরাও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করে এ নিয়ে কাজ করছি।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়- আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এক শ্রমিক সমাবেশ করা হবে। সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।
এবারের শ্রমিক দিবসে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। সেগুলো হচ্ছে- ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। বন্ধ পাটকলসহ সব বন্ধ কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকদের উপরে প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রেল ও বন্দর রক্ষায় এই সেক্টরের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।
শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বেতন-ভাতাসহ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে। সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য কমাতে হবে এবং কৃষকের উৎপন্ন ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের শিল্প কল-কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, গোলাম রব্বানী, লস্কর মো. তসলিম, কবির আহমেদ, মজিবুর রহমান ভুঁইয়া, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন