প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। তাদের অধিকার বিষয়ে আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে- তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। প্রতিবন্ধীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে ইতোমধ্যে আটটি প্রস্তাব ও সুপারিশের কথা জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
ধানমন্ডি সংস্থাটির কার্যালয়ে ডিস্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ (ডিআরডাব্লিউ) আয়োজিত ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সহযোগিতায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে অপ্রাপ্তি ও প্রত্যাশা রয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। প্রতিবন্ধীদের অধিকার একেবারে হয়নি বলবো না, তবে প্রত্যাশিত না। তাদের অধিকারের আন্দোলন মানুষের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকারে কাছে দাবি জানাচ্ছি, এ বিষয়গুলো অতিদ্রুত যেন বাস্তবায়ন করা হয়।
ডিআরডাব্লিউ সভাপতি মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি দাবি করে বলেন, দেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ২ কোটি ১৫ লাখ প্রতিবন্ধী। বর্তমান বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্দেশে বলতে চাই, এ সংখ্যাটির কমপক্ষে অর্ধেক মানুষ ভোটার। আমাদের উপেক্ষা করে কখনো উন্নয়ন হবে না। আমরা অন্তর্ভুক্ত একটি সমাজে বাস করতে চাই। আমরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসেছি। প্রতিবন্ধী মানুষদের অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
বক্তারা আরও বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা। এগুলোকে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা আসলে দায়িত্বের জায়গা থেকে দেখে না। তবে এটা যেন অধিকার ও দায়িত্বের জায়গা থেকে হয় সে বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করতে হবে।
এর আগে ডিস্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। এই সভায় বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা ছাড়াও নিম্নবর্ণিত সুনির্দিষ্ট সুপারিশগুলোকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে লিখিত আকারে উপস্থাপন করা হয়।
সেগুলো হলো- মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অ্যালোকেশন অব বিজনেসের সংশোধন করা; আইন বাস্তবায়নে কমিটিগুলো সচল করা; সিআরপিডি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ; এসডিজি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধীদের হিস্যা নিশ্চিতকরণ; জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ এবং প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বাজেট; সরকারি চাকরিতে কোটা; জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন পুনর্গঠন করা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্রীড়া পরিষদ তৈরি করা।
সুপারিশে বিগত বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার সময় প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, যাতায়াত ও প্রবেশগম্যতা, সামাজিক সুরক্ষা, আইনি সুরক্ষা, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের বিষয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাই সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-বান্ধব বলা হলেও তাদের দেখা হয়েছে মূলত করুণার পাত্র হিসেবে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ করলেও সার্বিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ জানার উপায় নেই। এক্ষেত্রে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জেন্ডার বাজেট, শিশু বাজেট, ক্লাইমেট বাজেটের অনুসরণে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বরাদ্দ প্রকাশ করে প্রতি বছর একটি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বাজেট প্রকাশ করার কথাও বলা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. নাফিসুর রহমান, সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এএইচএম নোমান খান, ডিআরডাব্লিউর সদস্য সচিব খন্দকার জহুরুল আলম ও সংস্থাটির সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন