নতুনের চেয়ে পুরোনো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও হস্তান্তর মাশুল বেশি হওয়াকে বৈষম্যমূলক দাবি করেছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন(বারভিডা)। গাড়ি মধ্যবিত্তের নাগালে রাখতে সংগঠনটি আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে গাড়ির উপর শুল্কহার কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যবসা-সহায়ক এবং ভোক্তা ও রাজস্ববান্ধব শুল্ক-বাণিজ্য নীতিমালা দাবি শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক কমানোর দাবি করেন বারভিডার নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জগলুল হোসেন প্রমুখ।
বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, গাড়ির আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে মধ্যবিত্তদের বিরাট অংশ গাড়ির মালিক হতে পারছেন না। গাড়ি এখন আর বিলাসী নয়, নিরাপদ বাহন হয়। মধ্যবিত্তরা গাড়ি ব্যবহার করতে পারলে দেশে গাড়ির বাজার এক লাখে উন্নীত হতে পারে। দেশে বর্তমানে বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়। আকার এক লাখে উন্নীত হলে দেশেই গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজনে আগ্রহী হবে বিদেশি কোম্পানিগুলো। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানিতে আমরা ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করছি। এটি কমানো দরকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রেজিস্ট্রেশন খরচ নতুনের চেয়ে পুরোনোটির অনেক বেশি তুলে ধরে বারভিডার সভাপতি বলেন, দেড় হাজার সিসি সক্ষমতার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা বদল ও ভ্যাট মিলিয়ে নতুন গাড়িতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার ৪০৮ টাকার বেশি। অন্যদিকে পুরাতন (রিকন্ডিশন) গাড়িতে এ খরচ এক লাখ সাত হাজার টাকার বেশি। সাড়ে তিন হাজার সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়িতে খরচ এক লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৮ টাকা। বিপরীতে পুরোনো গাড়ির বেলায় তা দুই লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ টাকা। মডেল ভেদে পুরোনো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন খরচ নতুনের তুলনায় ২৭ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকার মতো বেশি হওয়াটা বৈষম্যমূলক। এছাড়া গাড়ি আমদানি পরবর্তী শুল্কহার বেশি হওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত গাড়ি কিনতে পারছেন না। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ঝুঁকিপূর্ণ ছোট যানবাহনের কারণে প্রতি বছর সড়কে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত ও ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিম্নমানের গাড়ির সঙ্গে আঞ্চলিক পরিবহন রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা পরিবেশের জন্য হুমকি ও দেশের জন্য ক্যানসারে পরিণত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে। নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে গাড়ির দাম নাগালে আনতে শুল্কহার কমানোর দাবি করেন তিনি।
শুল্কহার বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে কমছে না দুর্ঘটনা। বিআরটিএর তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয় তিন লাখ ৭ হাজারটি। ২০২৩ সালে তা ছিল তিন লাখ ৬০ হাজার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রেজিস্ট্রেশন হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার। ২০১৫ সালের পর থেকে এটিই একক বছর হিসেবে সর্বোচ্চ। সরকার শুল্কহার কমালে দাম বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
বর্ধিত গাড়ির চাপ বর্তমান সড়কগুলো নিতে পারবে কি না, সে প্রশ্নে বারভিডা সভাপতি বলেন, আমরা গণপরিবহনকে সমর্থন করি। আমাদের মতো ঘন বসতির দেশে শুধু গাড়ি দিয়ে যানজট নিরসন সমাধান সম্ভব না। আমি মেট্রোরেল বাস্তবায়ন প্রকল্পে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক কম খরচে বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব। তাতে ভাড়াও কম হবে। জাপান অর্থায়ন ও প্রযুক্তি দেওয়ায় প্রথমবারের মতো দেশে মেট্রো নির্মাণ করায় খরচ বেশি হয় যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী যদি বিভিন্ন দেশ থেকে আনা যায়, তাহলে মেট্রোরেল খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন বারভিডার সভাপতি।
মন্তব্য করুন