কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘হাসিনারে নামাইতে পোলারে হারাইছি’

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সজল। ছবি : সংগৃহীত
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সজল। ছবি : সংগৃহীত

১৯ জুলাই, ২০২৪। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডেও পালিত হচ্ছিল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। সেদিন সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় চলছিল গুলির বিকট শব্দ। একের পর এক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুরো এলাকা পরিণত হয় ভয়ানক রণক্ষেত্রে।

সে দিন এই রণক্ষেত্রে প্রাণ যায় সজলের। প্রাণ বাঁচাতে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সজল। কিন্তু লুকিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার বাসিন্দা সজল।

সজলের বয়স মাত্র ২৩। জীবনের পুরোটা সময় পরিবার আর সমাজের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এক তরুণ, যিনি নিজের সব কষ্ট ঢেকে রাখতেন অনাবিল হাসির মোহন প্রলেপে। চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। সজলের মা-বাবা কখনোই ঠিকমতো পেটপুরে খেতে পারেননি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মুখে যেন কখনো অভাবের ছায়া না পড়ে- এই ছিল তাদের ব্রত। এই শিক্ষাটি মনেপ্রাণে মানতেন সজলও। ভাইবোন পড়ালেখা করলেও নিজে বাবার সঙ্গে সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সজল। চিটাগাং রোডে বাবার সঙ্গে জুতার কারখানায় কাজ করতেন।

আব্দুল হামিদ ও রুনা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে বড় ছিল সজল। ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। সজলের বোন রাইফা (১৭), ছোট বোন রুবিনা (১৪) ও ইব্রাহিম (১১) মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে।

সজলের মা রুনা বলেন, ‘আমি জানতাম সজল লুকায় লুকায় আন্দোলনে যায়, সামনে রাগ দেখাইলেও যাইতে বাধা দেই নাই৷ কিন্তু ওইদিন মনটা কেমন কেমন জানি করতাছিল। গুলির আওয়াজ ঘরেও পাইতেছিলাম৷’

আগের রাতে সজলের মা রুনা বেগম ঘুমাতে পারেননি। বুকের ভেতরটা কেমন জানি অস্থির লাগছিল। বারবার ছেলেকে বলছিলেন, ‘তুই যাস না রে বাবা, রাস্তায় কিছু হইব। তোর মুখের দিকে তাকাইলেই ডর লাগে।’

রুনা বেগম বলেন, ‘দুপুরে খাওয়ার পর আমি সজলরে বলছিলাম, তুই বাহিরে যাইছ না, আমার পাশে শুইয়া ঘুমা। মা তোমার লগেই ঘুমামু, একটু আসতাছি বলে আন্দোলনে চলে গিয়েছিল সজল। এই শেষ কথা হয় আমার ছেলের সাথে।’

শহীদ সজলের মা রুনা বেগম তার আদরের বড় সন্তানকে হারিয়ে এখনো গভীর শোকে ডুবে আছেন, যা তাকে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। মা আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে সজল বলত, ‘সবাইকেই দেশের জন্য রাস্তায় নামতে হইবো মা, ঘরে থাইকাও কেউ নিরাপদ নাহ্। আমি মরে গেলে তুমি শহীদের মা হবা। মনে করবা আমার আয়ু ওইটুকুই ছিল।’

রুনা বেগম ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমারে শহীদের মা বানাইয়া পোলায় কবরে ঘুমায় রইছে। আর আমার পাশে শুইয়া ঘুমাইতে আইবো না। কইবো না, মা তোমার লগেই ঘুমামু!’

সজলের বাবা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিক্ষোভে পড়ে কয়েক বছর আগে আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়। সেইডা নিয়া আমার কোনো খেদ নাই। আমার ছেলে বা আমরা তো কেউ কোটায় চাকরি করতাম না। আমাগো সেই চাহিদা ছিল না। কিন্তু হাসিনার মতো খারাপ মানুষকে সরকার থেকে নামাইতে চাইছিলাম। হাসিনাকে নামাইতে গিয়া সন্তান হারাইছি। ছেলেরে বিসর্জন দিয়া এই দেশের স্বাধীনতা পাইছি।’

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সজলের বাবা-ক্ষুব্ধ এই মা বলেন, ‘আমার ছেলেরে যারা মারছে তাগো আমি বিচার চাই, আমি বাঁইচা থাকতে ওই জালেমগো বিচার দেখতে চাই।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মে মাসেই দেশে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা শুরুর আশা

ফুটবলার মোরসালিনের বিয়ে বিচ্ছেদ, ৮ লাখ টাকায় স্ত্রীর মামলা প্রত্যাহার

শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির সময় পরিবর্তন

কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে খুবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ব্লকেড

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা, কোন দেশ কী বলছে?

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের সংঘর্ষ

পারভেজ হত্যার মূল আসামি গ্রেপ্তার

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পরেও রাগ পুষে রেখেছেন নেতানিয়াহু!

ছাত্রলীগ নেতার যে কথায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত 

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১০

দিনাজপুরে ভুয়া সেনা সদস্য গ্রেপ্তার

১১

কাশ্মীর ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

১২

অর্থ পাচারকারীরা শয়তানের মতো, এদের ধরা মুশকিল : দুদক কমিশনার

১৩

এক দিন পরেই সোনার দামে বড় পতন

১৪

জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা

১৫

আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নতুন সভাপতি জিল্লুর, সম্পাদক সাইদুল

১৬

কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ

১৭

কাশ্মীর হামলা নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের মুসলিম নেতা

১৮

প্রাইম এশিয়া শিক্ষার্থী হত্যায় বৈষম্যবিরোধী নেতা রিমান্ডে 

১৯

এবার গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে পরী মণির মামলা

২০
X