কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্যে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : হুমায়ুন কবির

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছবি : কালবেলা
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছবি : কালবেলা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর এফডিসিতে গাজা রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম হুমায়ুন কবির বলেন, মার্কিনিরা চাইছে গাজাবাসীকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন করতে। গাজায় যা হচ্ছে তা অমানবিক, বর্বর ও চরম নিষ্ঠুরতা। স্বজ্ঞানে একটি জাতিকে নিধনের চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, তেলের প্রধান উৎপাদক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ, তাই বর্তমানে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সক্ষমতা মুসলিম বিশ্বের নাই। মুসলিম বিশ্ব এখন এককভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেনা তাই এই বিষয়টি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। ফলে শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এর সাথে দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

এছাড়া সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল অহেতুক সমস্যা তৈরির করবে, যা না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই আইনটি মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির। এসময়, বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য’ বাক্যটি পুনরায় সংযোজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত যার মাধ্যমে দেশের মানুষের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গভীর সংকটে আজ ফিলিস্তিন। রক্তে ভাসছে গাজা। ইসরায়েলি গণহত্যার হাত থেকে নারী—শিশু, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে। মৃত্যুপুরি গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই। আছে শুধু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। হাসপাতালে, পথেঘাটে লাশের সারি। চতুর্দিকে মরা মানুষের গন্ধ। গণকবরে পরিণত করা হয়েছে গাজাকে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে যতটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে গাজায় তার চেয়েও বেশি অশ্রু ও রক্ত ঝরেছে। কিন্তু যে যৎসামান্য মানবিক ত্রাণসহায়তা দেওয়া হতো তাও এখন বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো বিভক্তি নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ফিলিস্তিন বাসীর এই লড়াই একার কোনো লড়াই নয়। গাজার মানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে ‘মার্চ ফর গাজা’ প্রমাণ করেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ লড়াই আমাদেরও লড়াই। সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। চিৎকার করে গাজা বাসীর সমর্থনে চোখের পানি ফেলেছে। সমাবেশে আমাদের অনেক তরুণ গাজার সমর্থনে যুদ্ধে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্ব বিবেকের কাছে বাংলাদেশের মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিন প্রতি সমর্থন বাড়লেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে গাজা রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনে ওআইসি গঠিত হলেও তাদের এই চরম দুর্দিনে সংস্থাটি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আরব লীগও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের উপর তারা নির্ভরশীল। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন এই দুইটি রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করতে পারে তার জন্য জাতিসংঘের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পাশে নিয়ে জাতিসংঘ ইসরায়েল ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা উদ্যোগ নিতে পারে। তাই মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গাজায় যখন মুসলিমরা বর্বরোচিতভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, তখনই ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম স্বার্থবিরোধী ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাশ করা হয়েছে। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মালিকানা ও অধিকার হরণের অপচেষ্টা হিসেবে বিজেপি সরকার মুসলমানদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের আর একটি অপচেষ্টা বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল। ওয়াক্ফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও অমুসলিমদের সদস্য করে মুসলিমদের দানকৃত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দখল করার অভিপ্রায় রয়েছে নতুন এই আইনে।

এর আগে ছায়া সংসদের শুরুতেই ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, রোকেয়া পারভীন জুঁই, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম

ধর্ষণের পর বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যা

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তেলাপোকা-কৃমি-কেঁচোতে আক্রান্ত : ব্যারিস্টার ফুয়াদ 

নারী বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে না পাকিস্তান

‘হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে’

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি

আনন্দ-উল্লাসে আবুধাবিতে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছে সরকার

নারী পোশাক শ্রমিককে গলাকেটে হত্যা, স্বামী পলাতক

খুলনায় আ.লী‌গের ঝটিকা মিছিল, নেতাকর্মীদের খুঁজছে পুলিশ

১০

মানুষের চোখে কখনো দেখা যায়নি এই রং, দাবি বিজ্ঞানীদের

১১

সিলেটে টেস্ট / প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ভালো শুরু, তবে বৃষ্টির হানা

১২

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি এখন জিয়া মঞ্চের সভাপতি

১৩

তাহলে কি ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আনচেলত্তি?

১৪

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বিএনপি

১৫

এখনো খোঁজ মেলেনি অপহৃত সেই ৫ শিক্ষার্থীর

১৬

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে হঠাৎ ঘোড়া

১৭

ঝুটবোঝাই চলন্ত ট্রাকে আগুন

১৮

ট্রাইব্যুনালে সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, পলকসহ ১৯ জন

১৯

বড় ভাইয়ের লোকজনের ধাওয়ায় পালিয়েও বাঁচতে পারল না ছোট ভাই

২০
X