সংস্কার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সারা দেশের বিচারকদের এই সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম এবং মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে কতিপয় সংস্কার কমিশন গঠন করেন। দীর্ঘ আলোচনা ও গবেষণার পরে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, সরকার সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো প্রাপ্তির পর এখন তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অন্যতম একটি সংস্কার প্রস্তাব ছিল অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক সচিবালয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারের লক্ষ্যে যেসব সংস্কার প্রস্তাব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার তালিকা করেছে, তার মধ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ আমল থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হলেও মাঝে পাকিস্তান আমল ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও কোন সরকারই তা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে ১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২০০৭সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার আংশিক বাস্তবায়ন হয়। এরপরে আর কোন অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই যে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মসনদে গেলে দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা আর চিন্তা করে না। এজন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ বলে আমরা মনে করি।
অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম এবং প্রধান অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। সমাজে প্রকৃত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীন বিচার বিভাগের বিকল্প নাই। বিগত দিনে বিচার বিভাগকে কীভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে তার নজির আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীভূত না হলে ভবিষ্যতেও হীন স্বার্থে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মহোদয় দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর বিচার বিভাগ সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাবনাসহ ঐতিহাসিক রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সংস্কার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন