চট্টগ্রামের ডিসি হিল, বগুড়া, বরিশাল ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নানা বাধা ও হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলা নববর্ষ দেশের বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক উৎসব। অথচ প্রশাসনের টালবাহানায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ডিসি হিলের বর্ষবরণ আয়োজন অনিশ্চয়তায় পড়ে। প্রায় দুই মাস ধরে অনুমতির বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করে প্রশাসন। অবশেষে আয়োজনের মাত্র দুদিন আগে অনুমতি দেওয়া হলেও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উদীচীর অভিযোগ, ডিসি হিলের আয়োজনে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ উল্লেখ করে উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অন্তত ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মঞ্চে উঠতে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার সুযোগে মৌলবাদী গোষ্ঠী আয়োজনে হামলা চালায়। পহেলা বৈশাখের আগের দিন তারা মিছিল নিয়ে গিয়ে মঞ্চসহ নানা সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। এর ফলে আয়োজকরা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাতিলে বাধ্য হন।
উদীচীর ভাষ্য অনুযায়ী, গান-কবিতার তালিকা চাওয়া, সংগঠনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ করা শিল্পীর স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এসব ঘটনার জন্য প্রশাসনের মধ্যে থাকা ‘বিকৃত মনমানসিকতার’ ব্যক্তিদের দায়ী করে তাদের বরখাস্তের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়াও, বগুড়ায় ‘দিন বদলের মঞ্চ’ ব্যানারে উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠনের আয়োজনেও বাধা দেয় প্রশাসন। পরে অনুমতি দিলেও অনুষ্ঠান সীমিত করার নানা চেষ্টা চলে। নববর্ষের দিন মৌলবাদীরা গান ও আবৃত্তি নিয়েও আপত্তি তোলে, তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।
বরিশালেও উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের বৈশাখী মেলা আয়োজনে বাধার ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’-এর প্রযোজনা ‘শেষের কবিতা’-র প্রদর্শনী বাতিল করা হয় তথাকথিত ‘তৌহিদি জনতার’ হুমকির মুখে।
উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দেওয়া হলেও আট মাস পার হলেও সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এখনো প্রগতিশীল সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক আয়োজন বাধার মুখে পড়ছে। তারা এসব ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায় বলেও মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন