বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে যেমন আনন্দের জোয়ার বইছে, তেমনি ব্যতিক্রম নয় দেশের কারাগারগুলোও। বাংলা ১৪৩২ সনের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর দেশজুড়ে আয়োজন করেছে হৃদয়ছোঁয়া ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেনের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে দেশের কেন্দ্রীয় ও প্রতিটা জেলা কারাগারে সকাল ৯টায় একযোগে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা। বন্দি, কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এই শোভাযাত্রা কারাগার প্রাঙ্গণকে পরিণত করে এক উৎসবমুখর মিলনমেলায়।
কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখের আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কারাগারগুলো ফেস্টুন, রঙিন কাপড়, আলোকসজ্জা ও বিভিন্ন লোকজ উপাদান দিয়ে সাজানো হয়, যাতে তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ উৎসব পরিবেশ।
বন্দিদের জন্য দিনটি ছিল বিশেষ আয়োজনমুখর। সকালের নাশতায় পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, আলু ভর্তা ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার। দুপুরে দেওয়া হয় পোলাও, মাংস, ডিম, মিষ্টি ও বাহারি পদের খাবার। বিকেলবেলায় প্রতিটি কারাগারে অনুষ্ঠিত হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বন্দিদের অংশগ্রহণে গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাটক ও লোকনৃত্যের মাধ্যমে আয়োজনটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও রাখা হয় আলাদা আয়োজন। খেলাধুলা, প্রতিযোগিতা, র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা- সব মিলিয়ে তাদের জন্যও ছিল এক আনন্দঘন অভিজ্ঞতা।
আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থাপনা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের বরণ করে নেওয়া হয় আন্তরিকতা ও মর্যাদার সঙ্গে। কারা কর্তৃপক্ষ আগত দর্শনার্থীদের মাঝে মিষ্টান্ন বিতরণ করে, যাতে উৎসবের অংশীদারিত্ব সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জে আয়োজন ছিল অনন্য। সকাল ৯টায় র্যালি ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। বন্দিদের মাঝে বিতরণ করা হয় পান্তা-ইলিশ ও ফলমূলসহ বাহারি খাবার। কারা মাঠে আয়োজন করা হয় লোকজ খেলাধুলা, ঘোড়ার গাড়ি প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকগানের আসর। বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করে কারাগারজুড়ে নির্মিত হয় এক টুকরো মিনি বাংলার প্রতিচ্ছবি।
এই আয়োজন নিছকই উৎসব উদযাপন নয়- বরং এটি প্রমাণ করে, বন্দিরাও এই সমাজেরই অংশ। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে তাদের মানসিক বিকাশ, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ এবং নতুন জীবনের প্রত্যাশা জেগে ওঠে।
মন্তব্য করুন