রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া চেয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। এ মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। দল-মত নির্বিশেষে এতে অংশ নেন ফিলিস্তিনপ্রেমী লাখো জনতা।
এর আগে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
শনিবার (১২ এপ্রিল) প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের আয়োজনে এ কর্মসূচির মূল মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি।
ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রথম দাবিগুলো জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- ‘জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতি নয়- গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।’
দ্বিতীয় দাবিগুলো জানানো হয় মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর প্রতি। এ দাবিগুলো হলো- ‘ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।’
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়- ‘বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়- বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর। পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে- যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।’
পরে ঘোষণাপত্রে একই মাটির মানুষ, একই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, একই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে অঙ্গীকার করা হয়। অঙ্গীকারগুলো হলো- ‘আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করব- প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব- যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো- যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে। আমরা বিভাজিত হবো না- কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে- ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ- সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।’
মন্তব্য করুন