বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অবশেষে সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার (৯ এপ্রিল) নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে পালটা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ড. ইউনূসের অনুরোধ অনুযায়ী ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন তিনি।
গত সোমবার (৭ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবর ওই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
অন্তর্বর্তী সরকার গত রোববার ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিল, তার অংশ হিসেবেই চিঠি দেওয়া হয় বলে জানান শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান, যাতে বাংলাদেশে মার্কিন রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার তার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কার্যক্রমের বিবরণী নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে শিগগিরই আরও একটি চিঠি পাঠাবেন বলেও প্রধান উপদেষ্টার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
‘আমাদের প্রধান কর্মপন্থা হলো তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করছি, যা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা’, বলা হয় ড. ইউনূসের চিঠিতে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সবচেয়ে কম হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপের ওপর শূন্য শুল্ক অব্যাহত রাখা হবে। গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসা সামগ্রীর মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের নন-ট্যারিফ বাধা দূর করা হচ্ছে। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে পণ্যের মান পরীক্ষা, লেবেলিং, সনদ ইত্যাদির বিষয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্টারলিংকের বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে—এ তথ্যও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে আরও বলা হয়েছে, এমন উদ্যোগ বেসামরিক বিমান চলাচল, সামরিক খাতসহ অগ্রসর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন