ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম জাল অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে চাকরি গ্রহণ করেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থের আত্মসাৎ হয়েছে মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিমের নিকট প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ভুয়া সনদে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চাকরি গ্রহণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ডিএসসিসিতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযুক্ত ব্যক্তি ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত নথি ও নিয়োগসংক্রান্ত নথিসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। জাল অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে চাকরি গ্রহণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের আত্মসাৎ হয়েছে মর্মে টিমের নিকট প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এ দুর্নীতি-অনিয়মের দায় দায়িত্ব নির্ধারণে নথিপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক টিম।
মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বিস্তারিতভাবে যাচাইপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শিগগিরই দাখিল করবে।
উল্লেখ্য, দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় গত ২ ডিসেম্বর ‘ভুয়া সনদে নগর পরিকল্পনাবিদ!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি নগর পরিকল্পনাবিদ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা চাওয়া হয় যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রিধারী হতে হবে। এ ছাড়া সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সহকারী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদ হিসেবে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৯ সালে ভর্তি হয়ে ২০০৬ সালের ২ জুন স্নাতক (অনার্স) পাস করেন। যেহেতু মাস্টার্স ডিগ্রি করতে অন্তত এক বছরের সময় প্রয়োজন কাজেই পরবর্তী সাত মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই চাকরির যোগ্যতায় মাস্টার্স পাস চাওয়া হলেও নজরুল ইসলাম আবেদনে সেই সনদ দিতে পারেননি। অন্যদিকে সাভার পৌরসভায় সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চাকরি করার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি ভুয়া সনদপত্র জমা দেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে ওই সময় ডিসিসির পক্ষ থেকে সাভার পৌরসভার কাছে জানতে চাইলে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০৬ সালের আগে সাভার পৌরসভায় নগর পরিকল্পনাবিদের কোনো পদই ছিল না। সাভারে এই পদের সৃষ্টি হয় ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। আর নজরুল ইসলামের দাখিলকৃত অভিজ্ঞতা সনদে দেখা যায় তিনি ২০০২ সালে ১ আগস্ট থেকে ২০০৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সাভার পৌরসভায় সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চাকরি করেছেন। তাই তার সনদপত্রটি যে ভুয়া বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয়।
অন্যদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বছরখানেক পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এর দীর্ঘদিন পরেও পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে হঠাৎ করেই ২০১২ সালের জুলাইয়ে নজরুল ইসলামকে ডিএসসিসির নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর তাকে সিস্টেম অ্যানালিস্টেরও দায়িত্ব দেয় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন