কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৮ জেলায় তাণ্ডব

সিলেটে কেএফসিতে ভাঙচুর। ছবি : কালবেলা
সিলেটে কেএফসিতে ভাঙচুর। ছবি : কালবেলা

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিল থেকে দেশের আট জেলায় ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি করায় রেস্তোরাঁ ও শোরুমে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) এসব ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার

ইসরায়েলি কোমল পানীয় রাখার অভিযোগে অন্তত ৫টি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল জানান, ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

কক্সবাজারে রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান জানান, পুলিশ মিছিলের আগে পিছে ছিল। কিছু অতি উৎসাহী মানুষ ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছে।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় কেএফসি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সোমবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রানীরবাজার এম আলী টাওয়ারের সামনে বিভিন্ন মিছিল থেকে জড়ো হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি বিভিন্ন তৈরি খাবার ও কোমল পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। এমন অভিযোগে কেএফসির টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়াও কাচের দেয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লায় কেএফসিতে ভাঙচুর।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুল মালিক ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেএফসির কুমিল্লা শাখার আরজিএম হাফেজ দিদার আহমেদ।

সিলেট

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে সিলেটের কেএফসি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় নষ্ট করা হয়। পরে নগরীর দরগাহ, জিন্দাবাজার, বন্দর বাজারসহ ৪টি বাটা শোরুমে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।

সোমবার বিকেল ৩টায় এ ঘটনা ঘটে।

নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকায় রয়েল মার্ক ভবনের দুই তলায় থাকা কেএফসিতে দুই দফা হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে কেএফসিতে এ হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নগরে বের হওয়া মিছিলের একটি অংশ দুপুর আড়াইটার দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসিতে হামলা চালায়।

সিলেটে রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।

এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চলে। কেএফসির ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ফ্রিজে এবং স্টকে থাকা পেপসি, সেভেনআপ, মাউন্টেন ডিউসহ শত শত বোতল কোমল পানীয় রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। পরে ভবনে থাকা হোটেল রয়েল মার্কের রিসিপশন এরিয়া ও তৃতীয় তলার সাফরা রেস্টুরেন্টেও হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, গাজায় চলমান হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিলেটের তৌহিদি জনতা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে। আমরা পুলিশ প্রশাসন সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুসল্লিদের সহযোগিতা করেছি। হঠাৎ পেছন থেকে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ কেএফসিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কেএফসির গ্লাস এবং ভেতরে প্রবেশ করে ফার্নিচার ও মালামাল ভাঙচুর চালায়। আমরা বিক্ষুব্ধ জনতাকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

খুলনা

খুলনার ময়লাপোতায় কেএফসি, ডোমিনোজ পিৎজা এবং শিববাড়ির বাটা শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’ এ ভাঙচুর চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে শেষে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলের পর বিপুল সংখ্যক মানুষ হঠাৎ কেএফসি রেস্টুরেন্টে হামলা করেন। এ সময় পাশে থাকা ডোমিনোজ পিৎজা রেস্টুরেন্টেও হামলা করা হয়। প্রথমে নিচ থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে বাইরের গ্লাস ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে ভেতরে গিয়ে ভাঙচুর করা হয় ও মালামাল লুট করা হয়। হামলার সময় বাইরের গ্লাস এবং ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয় তারা।

খুলনায় কেএফসি, ডোমিনোজ ও বাটার শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, হঠাৎ করেই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। মিছিল অন্যদিকে ছিল কিন্তু এখানে কারা হামলা করেছে তা বলা যাচ্ছে না। ভাঙচুর করে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যান। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

গাজীপুর

গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় বাটার শোরুমসহ কয়েকটি দোকানের সামনে বিলবোর্ড, ব্যানার, ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) নূর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন বলেন, বিক্ষোভকারীরা বিকেলে বাটার শোরুমের বাইরের ব্যানার ভাঙচুর করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকা থেকে সর্বস্তরের ‘মুসলিম তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

বরিশাল

ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে কেএফসির বরিশাল ব্রাঞ্চ সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা। পরে বিকেল ৫টার দিকে নগরীর শাখাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযোগ করেন, কেএফসি ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা করে। যে অর্থের একাংশ যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনতা কেএফসি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা কেএফসির সামনের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করেন।

বরিশাল নগরীর কেএফসির শাখাটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধরা কেএফসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। কেএফসির লোগো ভেঙে ফেললেও বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বগুড়া

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিল থেকে বগুড়ায় বাটার শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা শহরের সাতমাথায় অবস্থিত বাটার শোরুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গ্লাস ভাঙচুর করে।

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তারা সেখানে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের দাবিতে স্লোগান দেয় এবং ভাঙচুর চালায়।

চট্টগ্রাম

বিক্ষোভ মিছিল থেকে চট্টগ্রামে কেএফসির দুটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ‘মার্চ ফর গাজা’ মিছিল থেকে নগরীর নাসিরাবাদ ও চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

নগরীর ষোলশহর থেকে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মিছিলটি থেকে কিছু লোক নাসিরাবাদ সানমার ওশান সিটির পাশের ভবনে কেএফসি রেস্তোরাঁয় ঢিল ছুড়লে সামনের কাচ ভেঙে যায়। সেখান থেকে কিছু লোক জিইসি মোড়ে জামান হোটেলের কোকাকোলার সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, মিছিল থেকে সাইনবোর্ডে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি।

এদিকে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সিলেট থেকে তিনজনকে আটকের বিষয়টি জানা গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াতের নিন্দা

ছাত্র প্রতিনিধিদের এখন সরকার থেকে পদত্যাগ করা দরকার : ভিপি নুর

উত্তরা থেকে তুরিন আফরোজ গ্রেপ্তার

থানা নিরাপত্তা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বিল্লাল এখন রিমান্ডে

শোরুমে হামলা নিয়ে বাটার বিবৃতি

ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : প্রিন্স

সড়ক নির্মাণে বিএসএফের বাধা

বানরের রুটি ভাগের খেলায় মেতেছেন আরবের শেখরা

শাহ আমানত বিমানবন্দরে কোটি টাকার সোনা জব্দ

বিতর্কিতদের নিয়ে খুলনায় বিএনপির কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ

১০

সিলেটসহ অন্যান্য স্থানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ

১১

৮ জেলায় তাণ্ডব

১২

বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিলেন ইউএনও

১৩

বন্ধুকে নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণচেষ্টা, অতঃপর...

১৪

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়িতে হামলা, ৬ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

১৫

টঙ্গীতে ছুরিকাঘাতে পোশাক শ্রমিক নিহত, গ্রেপ্তার ১

১৬

চট্টগ্রামে জোড়া খুন, ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার আরও একজন

১৭

‘স্বাধীনতা কনসার্ট’ স্থগিত

১৮

সিইপিজেডে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

১৯

শান্ত-মিরাজদের ফিল্ডিং কোচ প্যামেন্ট

২০
X