বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। এবার বাংলাদেশেও স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু হবে, যা পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হবে।
রোববার (৬ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ২৯ মার্চ স্টারলিংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিডা থেকে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই নিবন্ধনও স্টারলিংককে দেওয়া হয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও জানান, পরিচালনার জন্য যে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) লাইসেন্সের প্রয়োজন, স্টারলিংকের আজ (রোববার) আবেদন করার কথা রয়েছে। নিয়ম মেনে আবেদন করলে অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করার জন্য কোনো বাধা থাকবে না।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আগামী ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট-সেবা ব্যবহার করা হবে। সেখানে উপস্থিত সব অংশগ্রহণকারী সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়। সেখানে বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট-সেবা চালুর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রযুক্তি খাতের ব্যক্তিরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা পাওয়া যাবে। ফলে ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তরুণরা। দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
স্টারলিংক কী, কীভাবে কাজ করে
স্টারলিংক একটি লো-অরবিট স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এটি প্রচলিত ফাইবার অপটিক ও মোবাইল নেটওয়ার্কের চেয়ে ভিন্ন, কারণ এখানে ভূস্থাপিত টাওয়ারের পরিবর্তে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়। ফলে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপাঞ্চল এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে স্টারলিংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। দেশে এখনো অনেক এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই। বিশেষ করে চর, পাহাড় ও দুর্গম গ্রামগুলোয় ইন্টারনেট সুবিধার অভাব রয়েছে। স্টারলিংক এই সমস্যা দূর করতে পারে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ পৌঁছে দিতে সহায়তা করতে পারে।
গ্রাহক কীভাবে সংযোগ পাবেন
স্টারলিংক সংযোগ পেতে হলে, গ্রাহকদের প্রথমে স্টারলিংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (starlink.com) গিয়ে আগ্রহী গ্রাহক হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর সংযোগ পাওয়া যায় কি না, তা পরীক্ষা করতে ঠিকানা দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। প্রি-অর্ডার কনফার্ম করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হতে পারে। ডেলিভারির পর, স্টারলিংক কিট (স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার) সেটআপ করতে হবে। এরপর স্টারলিংক অ্যাপের মাধ্যমে সংযোগ সক্রিয় করতে হবে। এটি একটি সম্ভাব্য প্রক্রিয়া।
মন্তব্য করুন