হিন্দু সম্প্রদায়ের মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী শুভ রামনবমী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট (একাংশ)।
রোববার (৬ এপ্রিল) সকালে পুরান ঢাকার ওয়ারীর রাম-সীতা মন্দিরের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে জয়কালী মন্দির মোড়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় কয়েকশ রামভক্ত অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য এবং প্রজার প্রতি রাজার ন্যায়পরায়নতার শিক্ষা আমরা রামায়ন থেকে পায়। বর্তমান সময়ে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্যতা ও সমতা বজায় রেখে সুসম্পর্ক চায়।
আমরা মনে করি, গত শুক্রবার ব্যাংককে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, তার মধ্যে দিয়ে গত কয়েকমাস ধরে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের পরিপূরক হয়ে সামনে পথ চলবে।
দৈনিক ভোরের ডাকের চিফ রিপোর্টার ও সার্ক কালচারাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুজন দে বলেন, মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উদ্রবাদী শক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অপচেষ্টা করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণে দেশে দেশে উগ্রবাদীদের দ্বারা সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়। পৃথিবীর যে কোনো স্থানে উগ্রবাদী শক্তির আস্ফালন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দীর্ঘকাল ধরে এ দেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শারদীয় দুর্গাপূজা, শনিবারের লাঙ্গলবন্দে স্নান, আজকের রামনবমীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে যেভাবে সরকার নিরাপত্তা বিধান করেছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে আন্তরিকতার সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এজন্য অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি হিন্দু সম্প্রদায় কৃতজ্ঞ।
বিবেকানন্দ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, আজকের এই দিনে আসুন, আমরা ভগবান রাম চন্দ্রের আদর্শ নিয়ে আমাদের জীবনকে গড়ে তুলি। আমাদের সবার উচিত, রাম চন্দ্রের মতো চরিত্রে বলবান হওয়া।
তিনি আরও বলেন, ধর্মগ্রন্থ পড়ে কী লাভ হবে, যদি আমরা ধার্মিক না হতে পারি। বাংলাদেশ আমাদের সবার। এখানে সব ধর্মের মানুষ আমরা মিলেমিশে থাকব।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ পাল, বিবেকানন্দ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক অরবিন্দ হাওলাদার, শ্রৗকৃষ্ণ সেবা সংঘের আহ্বায়ক নকুল কুমার সাহা, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় নেতা বিশ্বনাথ মাহান্থ, খোকন সাহা, প্রেম কুমার দাশ, তাপস বিশ্বাস (রাজিব) সুনীল দাশ, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজিব কুন্ডু তপু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিলয় পাল আদর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ্র তালুকদার, গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক শুভজিৎ চক্রবর্তী ও কেন্দ্রীয় নেতা পার্থ দাশ।
মন্তব্য করুন