দেশে বর্তমানে মানুষের অবস্থা ২০২২ সালের তুলনায় খারাপ হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালে বেড়েছে দারিদ্র্যের হার এবং খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা। দুই বছর আগে মানুষ যেমন ছিল এখন তারা তার চেয়ে খারাপ আছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পার্সেপশন সার্ভের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সংস্থাটির কার্যালয়ের সন্সেমন কক্ষে এক সেমিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. একে এনামুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
সার্ভেটি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের সহায়তায় এবং বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন ড. ইউনূস। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ সিসেমানি পারসেসমেন্ট।
জরিপ প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের হাইজহোল্ড ইনকাসম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের সঙ্গে বিআইডিএসের এই পার্সেপসন সার্ভের তুলনা হবে না। তবে বর্তমানে মানুষের অবস্থা যে খারাপ সেটি আমরা পেয়েছি। যেটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে।
তিনি জানান, ২০২২ সালের হিসেবে দেশে গরিব মানুষ ছিল ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০২৪ সালের জরিপে পাওয়া গেছে ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে গ্রামে দরিদ্র মানুষের হার ২০২২ সালের ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ, একইভাবে অতিদরিদ্র মানুষের হার ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এদিকে শহরে দরিদ্র মানুষের হার ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া অতিদারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় দরিদ্রতার হার ২০২২ সালের ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে হয়েছে ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া অতিদারিদ্র্যের হার একই অর্থাৎ ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই রয়েছে। খুলনায় দারিদ্র্য হার ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। রংপুরে দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়ে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্য হার ২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া সিলেটে দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগত ৩৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ২০২২ সালে করা বিবিএসের সার্ভের তথ্যের সঙ্গে এই পার্সেপশন সার্ভেও তুলনা না হলেও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে বিআইডিএসের এই সার্ভেটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের নীতি নির্ধারণ এসব তথ্য ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে দারিদ্র্য হার বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, দেশে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক কারণ ইত্যাদি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমানি পারসেসমেন্ট বলেন, এটি বিবিএসের সঙ্গে তুলনা না চললেও বর্তমান পরিস্থিতি বোঝাতে বেশ কাজে দেবে। এর ফলে সরকারের যে কোনো নীতি নির্ধারণ অনেক বেশি সঠিক হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর বলেন, বিআইডিএসের সার্ভের সঙ্গে বিবিএসের জরিপের কখনো তুলনা করা যাবে না। এটা তুলনা করলে ভুল হবে।
মন্তব্য করুন