ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য উদ্যোক্তা তৈরি করা। এমন মন্তব্য করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান। রোববার (২৩ মার্চ) বিসিকের উদ্যোগে সিএমএসএম শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তারা ওই মন্তব্য করেন।
ঢাকায় তেজগাঁওস্থ বিসিক প্রধান কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএম) শিল্পের ভূমিকা : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সেমিনারের উদ্বোধন করেন। সেমিনারে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, সরকারের লক্ষ্য উদ্যোক্তা তৈরি করা। আমাদের উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নতুনদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটানো। তিনি উল্লেখ করেন, বিসিক দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে তিনি বিসিকের সীমাবদ্ধতার ও সমস্যা সমাধানে জোর তাগিদ প্রদান করেন।
সেমিনারের আয়োজনের অংশ হিসেবে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা এবং নীতিনির্ধারকরা শিল্প খাতের বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
বিসিক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মধু উদ্যোক্তা শেখ নুরুল হুদা মধু শিল্পের প্রসার ও এর দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য ‘মধু বোর্ড’ গঠনের দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের মধু উৎপাদন ও রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক, সঠিক নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পেলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে পরিণত হতে পারে।’
চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তা তাহমিনা শাম্মী চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য বৈশ্বিক মানের মার্কেটিং কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, যদি সঠিক বিপণন ও নেটওয়ার্কিং নিশ্চিত করা হয়।’
তাঁত শিল্পের প্রসারে কাজ করা উদ্যোক্তা লাকী ভূঁইয়া বলেন, ‘তাঁত শিল্প বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই শিল্পের বিকাশে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।’
বিসিকের মহাব্যবস্থাপক ড. ফরহাদ আহম্মেদ উদ্যোক্তাদের বিসিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিসিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে, কিন্তু অনেক উদ্যোক্তা সে সম্পর্কে অবগত নন। তাই উদ্যোক্তাদের বিসিকের ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ঋণ কর্মসূচি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।
বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিসিক ভবনের নিচতলায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দেশীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পণ্যগুলো নিয়মিত প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিসিক উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ঋণ কর্মসূচি, উদ্যোক্তা তৈরির কর্মসূচি, এপিআই শিল্প পার্ক, নতুন শিল্প নগরী গঠন ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা, লবণ শিল্প, মধু প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া শিল্পের উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও সিএমএসই ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ আলী সাবেতসহ বিসিকের উদ্যোক্তা ও চেম্বারের প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, একই দিন বিসিক ঈদ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। উদ্বোধন শেষে শিল্প উপদেষ্টা মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় তেজগাঁওস্থ বিসিক প্রধান কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী চলবে বিসিকের এ ঈদ মেলা।
মন্তব্য করুন