মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩২
বাসস
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে ছিলেন ৬ ভাই, শহীদ হলেন রাসেল

শহীদ মো. রাসেল। ছবি : সংগৃহীত
শহীদ মো. রাসেল। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল সব শ্রেণিপেশার মানুষ। দিনমজুর থেকে ব্যবসায়ী। ছাত্র থেকে চাকরিজীবী বাদ যায়নি কেউই। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আন্দোলনে যোগ দেন মাছ ব্যবসায়ী মো. রাসেল (২৯)। যাত্রাবাড়ীর কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হন তিনি।

শহীদ রাসেলের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার আলীপুরা গ্রামে। তার বাবার নাম মরহুম আবু কালাম। আর মায়ের নাম সফুরা বেগম (৬০)। ছয় ভাইবোনের মধ্যে রাসেল ছিলেন তৃতীয়। ব্যক্তিগত জীবনে রাসেল বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম বর্ষা (২০)।

বাসসকে ঘটনার বর্ণনায় শহীদ রাসেলের বড় ভাই মো. রুবেল বলেন, ৪ আগস্ট বিকেলে রাসেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, আগামীকাল ৫ আগস্ট সকাল ৮টায় চলে আসবি। আমরা আন্দোলনে মেইন ঢাকার দিকে রওয়ানা দেব। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আমরা ছয় ভাই একসঙ্গে জড়ো হই। পরে ছাত্র-জনতার সঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানা অতিক্রম করার পরিকল্পনা করি।

রুবেল বলেন, তখন সকাল সাড়ে ১০টা। আমরা ছাত্র-জনতার সঙ্গে শনির আখড়া পার হয়ে কাজলা ফুটওভার ব্রিজের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ উপর্যুপরি গুলি করা শুরু করে।

তাকিয়ে দেখি চোখের সামনে চারজন লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েছে। তারপর খেয়াল করলাম, গুলিবিদ্ধদের মধ্যে আমার ভাই রাসেলও আছে। গুলির এত বেশি তাণ্ডব ছিল যে আমার ভাইয়ের পড়া থাকা দেহটা তুলে আনতে পারিনি। আমরা রাসেলকে রাস্তায় শোয়া অবস্থায় রেখেই নিরুপায় হয়ে পিছু হটেছি। কারণ গোলাগুলির তীব্রতা ছিল ভয়াবহ।

পরে আমরা নিরাপদ স্থানে এসে চিন্তা করেছি, কীভাবে গুলিবিদ্ধ আমার ভাই রাসেলকে ওই বিশ্বরোড থেকে নিরাপদ জায়গায় আনা যায়। আমরা গোলাগুলি থামার অপেক্ষায় ছিলাম। কোনোভাবেই থামছিল না। পুরো এলাকা জুড়ে থমথমে পরিবেশ। যখনই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই দৌড়ে গেলাম। আমার ভাইকে আর জীবিত পেলাম না।

রাসেল মূলত ঘটনাস্থলে মারা গেছে বলে জানান রাসেলের বড় ভাই রুবেল।

রুবেল জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও শেষ চেষ্টা হিসেবে রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লাশ আনতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার ভাইয়ের লাশ দেবে না বলা হয়।

এরপরে আমি ছাত্র-জনতাকে জানালে তারা গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ আমাদের বুঝিয়ে দেয়। রাসেলের লাশ বাসায় এনে গোসল করিয়ে জানাজা দেওয়া হয়েছে। রাসেল যেখানে গুলি খেয়ে শহীদ হয়েছে ঠিক সেখানেই তার জানাজা হয়েছে।

মৃত্যুপরবর্তী সব ধাপ শেষ করে রাসেলকে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করেছি। আমি চাই হুকুমের আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আর ডিবি হারুনের কঠিন বিচার হোক।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া এসব খুনিদের যেন ফাঁসি হয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগও অনেককে গুলি করে মেরেছে তাদেরও বিচার চাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুবেল বলেন, ৪ আগস্ট কাজলা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমি দুইটি লাশ দিয়ে এসেছি। আর ওই জায়গাটাতেই আমার ভাই রাসেল মারা গেল। এটি আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি আমার ছোট ভাইকে অনেক মিস করি। রাসেলকে হারিয়ে আমার জগৎটা অন্ধকার লাগে। কোথায় পাব আমার কলিজার ছোট ভাইকে।

কোনো অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে শহীদ রাসেলের বড় ভাই বাসসকে জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে এ পর্যন্ত হাতে দুই লাখ টাকা পেয়েছি। এরমধ্যে এক লাখ আমরা পেয়েছি, আরেক লাখ পেয়েছে তার বউ বর্ষা।

এ ছাড়া আমরা ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ আবেদন করেছি। তারা চেকও দিয়েছে ৫ লাখ টাকার। কিন্তু সেই টাকা কিছু জটিলতার কারণে হাতে পাইনি এখনও।

রাসেলের অসুস্থ মা সফুরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেটাকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই। আর আমার একটা ছেলেকে যেন সরকার চাকরি দেয়। আমার ছেলেটাকে সরকারি চাকরি দিলে আমি বাকি জীবন শান্তিতে পার করতে পারব। তাই সরকার যেন আমার একটা ছেলেকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। এটাই আমার সরকারের প্রতি চাওয়া।

শহীদ রাসেলের ভাবি রাত্রি আক্তার বলেন, রাসেল অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। রাসেল যে মারা গেছে এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। ওর যত কথা সব আমার সঙ্গে শেয়ার করত। প্রতিদিন একবার হলেও আমার সঙ্গে দেখা করত রাসেল। আমার ভাইয়ের জন্য অনেক খারাপ লাগে। এখন আমরা রাসেল হত্যার বিচার চাই। আর রাসেলের মায়ের দেখাশোনা করার জন্য একটা ছেলের সরকারি চাকরি চাই।

উল্লেখ্য, যাত্রাবাড়ী থানায় শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে শহীদ রাসেলের বড় ভাই মো.রুবেল একটি মামলা করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তামিম এখন অনেকটাই ভালো’

এসিআই মটরস’র উদ্যোগে দেশব্যাপী ইফতার মাহফিল

জন্মদিনেও আনন্দ নেই সাকিবের, তামিমের সুস্থতার জন্য দোয়া চাইলেন

নোয়াখালীতে এনসিপির পথসভায় হামলা, হান্নান মাসউদসহ আহত ২০

জামিনে মুক্ত হলেন শমসের মুবিন চৌধুরী

তামিমের সুস্থতার জন্য দোয়া করলেন জামাল-হামজারা

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে : সেলিম ভূঁইয়া

বাক স্বাধীনতার জন্যই আমরা এতদিন সংগ্রাম করেছি : রিতা

গুম-খুন-শহীদ পরিবারকে তারেক রহমানের ঈদ উপহার

আ.লীগকে পুনর্বাসিত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে : নাহিদ ইসলাম

১০

কার্ডিয়াক স্টেন্টিং বা পেসমেকার নিয়ে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা- কতটা নিরাপদ?

১১

নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না : আমিনুল হক

১২

সেনাবাহিনী ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ, তাদের বিতর্কিত করবেন না : নীরব

১৩

হান্নান মাসুউদের পথসভায় বাধা, আহত ৩

১৪

অর্থনীতির সবখানেই জিয়াউর রহমানের স্পর্শ রয়েছে : রিজভী

১৫

৪ জেলায় বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা

১৬

অস্ট্রেলিয়া বিএনপির ইফতারে সিনেটর শোব্রিজ / বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচন জরুরি

১৭

দেশে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : তারেক রহমান

১৮

সংকট উত্তরণে রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিএনপিকে দরকার : মুরাদ

১৯

দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

২০
X